পুঁজিবাজারের অস্থিরতা: থমকে গেছে সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপন প্রক্রিয়া
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০১৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ণপুঁজিবাজারে অস্থিরতার কারনে থমকে গেছে সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের পক্রিয়া। গত মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপন উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে পুুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় উদ্যোক্তা ও সরকার উভয় পক্ষই নতুন করে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জ (এসএসই) স্থাপন। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও আরেকবার উদ্যোগ নিয়ে ভেস্তে যায় সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপন পক্রিয়া।
সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সিলেটে একটি স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিলেন প্রবাসী সিলেটিরা। প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সিলেটের শিল্পউদ্যোক্তারাও এমন দাবি জানিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিনের এই দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে বেশক’জন প্রবাসী উদোক্তা সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে পুঁজিবাজারে অচামকা অস্থিরতা দেখা দিলে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের পরিকল্পিনা থেকে পিছু হঠেন তারা।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আবার সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হন সিলেটের সরকার দলীয় বেশক’জন সাংসদ, সরকার দলীয় নেতা, শিল্পউদ্যোক্তা, প্রবাসী ও ব্যাংকার। এই উদ্যোক্তাদের অনেকেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রিয়ভাজন ও ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতি।
এ যাত্রায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অনেকদূর এগিয়েও যায়। সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জ (এসএসই) গঠনের লক্ষে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) একটি প্রস্তাবও জমা দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সবুজ সংকেত ছিলো বলে জানা গেছে। তবে সকল উদ্যোগ ও সম্ভাবনাই থমকে যায় পুঁজিবাজারে অস্বাভিক দরপতনে সৃষ্ট অস্থিরতায়।
উদ্যোক্তারা জানান, এসইসিতে সিলেট স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবটি জমা দেওয়ার সময় পুঁজিবাজার বেশ চাঙ্গা ছিলো। সিলেটে শেয়ারবাজারে প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষে তখন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারও তখন এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলো। এরপর পুজিবাজার অস্থির হয়ে উঠলে এখন নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে আসে সরকার। উদ্যোক্তারাও এ ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানা গেছে।
তবে সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে তা মানতে মোটেও রাজি নন সিলেটের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এসইসি’র কাছে যে প্রস্তাবটি তারা জমা দিয়েছেন তা এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পুঁজিবাজারে স্থিরতা এলেই এসইসি’র অনুমোদন মিলে যাবে বলেই তারা আশাবাদ প্রকাশ করেন তারা।
সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের উদ্যেগের সাথে সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, রুপালি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমেদ আল কবির, কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সারওয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাংসদ ইমরান আহমদ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে একটি পরিচালনা পর্ষদের প্রস্তাবও জমা দেওয়া হয় এসইসি’র কাছে।
এ ব্যাপারে সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, একটি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছিলো। বর্তমানে এ উদ্যোগ অনেকটা স্থগিত অবস্থায় আছে।
তবে সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কি না এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেক বিনিয়োগকারী। প্রবাসী ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, যে কোনো স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্তই হচ্ছে সেখানে তালিকাভুক্তির যোগ্য পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠান থাকা। সিলেটে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। ভৌগোলিক ও অবস্থানগত কারণে সিলেটে তেমন কোনো শিল্প-কারখানাও গড়ে ওঠেনি। তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হবে? বিনিয়োগকারীরাই বা কোথায় তাদের অর্থ বিনিয়োগ করবেন? স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগে এটা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপাারে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ বলেন, দু’একবার সিলেটে স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। এখন যে দু’টি স্টক এক্সচেঞ্জ আছে সেগুলোর অবস্থাই ভালো নয়। নতুন করে আর স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপনের যৌক্তিকতা নেই।
. . . . . . . . .