ওসমানী বিমাবন্দর: ১৪ বছরেও নির্মিত হয়নি কার্গো ভিলেজ!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০১৫, ৯:০২ অপরাহ্ণসিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরের সাথে আন্তর্জাতিক তকমা লাগার প্রায় ১৪ বছর পেরিয়ে গেছে। ২০১১ সালে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। ওই সময় থেকেই সিলেটের ব্যবসায়ীরা রফতানি কার্যক্রমের জন্য ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের সেই দাবি এখনো পর্যন্ত দাবিই রয়ে গেছে। বাস্তবায়ন আর হয়নি। তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি দেয়া হলেও রাখা হয়নি তা। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও কয়েকবার কার্গো ভিলেজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আশ্বাস আর বাস্তবায়ন হয়নি। এমতাবস্থায় অনেক সম্ভাবনাময় হওয়া সত্তে¡ও আকাশপথে রফতানি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা।
সিলেটের রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০১ সালে ওসমানীকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করার পর থেকেই তারা এখানে কার্গো ভিলেজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। ওই সময়কার অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান ব্যবসায়ীদের দাবিকে যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি ওসমানীতে কার্গো ভিলেজ নির্মাণের আশ্বাস প্রদান করেন। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাস্তবায়িত হয়নি তাদের আশ্বাস। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সিলেট চেম্বারে আয়োজিত এক কর্মশালায় ব্যবসায়ীরা অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে ওসমানীতে কার্গো ভিলেজ নির্মাণের দাবি জানান।
রফতানিকারকরা জানান, সিলেট থেকে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সাতকড়া, লেবু, পান, বিভিন্ন জাতের সবজি, শুঁটকি, মাছ প্রভৃতি রফতানি করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হয় রফতানিকারকদের। ওসমানীতে কার্গো ভিলেজ না থাকায় বাধ্য হয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে হয়। এতে করে একদিকে রফতানি ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য ধীরে ধীরে বাজার হারিয়ে বসার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সিলেটের প্রবাসীদের অভিযোগ হচ্ছে, তারা দেশ থেকে প্রবাসে যাওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের পণ্য সাথে করে নিতে চান। কিন্তু ওসমানীতে কার্গো ভিলেজ না থাকায় তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় সিলেট জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোটার্স গ্রæপের সভাপতি হিলকিল গুলজারের সাথে। তিনি বলেন, ‘ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হলো, অথচ এখনো কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এ বিমানবন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা সুফল পাচ্ছেন না। এখান থেকে পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পণ্য পরিবহন থেকে আসা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।’
তিনি আরো বলেন, ‘হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শিল্পপল্লী গড়ে উঠছে। ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ থাকলে এখানকার উৎপাদিত পণ্য সিলেট দিয়েই রফতানি করা সম্ভব হতো। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হতেন, তেমনি সরকারও লাভবান হতো। এছাড়া সিলেট থেকে শাকসবজি, ফলমূল রফতানি অনেক বেড়ে যেত। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়তে তা অবদান রাখতো।’
এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘আমরা প্রায় এক যুগ ধরে ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজ স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কার্গো ভিলেজ স্থাপনের কোনো উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না। এতে এখানকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রফতানিরও প্রসার ঘটছে না।’
ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এম হাফিজ আহমদ বলেন, ‘ওসমানীতে আগে রিফুয়েলিং স্টেশন ছিল না। এখন হয়েছে। এ অঞ্চল থেকে রফতানি কার্যক্রম বাড়লে কার্গো ভিলেজও নিশ্চয়ই হবে।’
. . . . . . . . .