বেশি নম্বর পাওয়ার আশায় শিক্ষকদেরর সঙ্গে অনৈতকি সম্পর্কে ঢাবি ছাত্রীরা!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০১৬, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণপ্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারাই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা অত্যন্ত মেধাবি এবং সৌভাগ্যবান। পশ্চিমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সব দিক দিয়ে মিল না পাওয়া গেলেও একটা দিকে ঠিকই কিছুটা মিল পাওয়া যায়। আর তা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন কেলেংকারির বিষয়টি।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন ছাত্রীরা। প্রিয় ক্যাম্পাসে এসেই নানা স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠেন ছাত্রীরা। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় অসাধু শিক্ষক। পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার আশায় উচ্চবিলাসী কতিপয় ছাত্রী অনেক সময় শিক্ষকের সঙ্গে অনৈতকি সম্পর্কে জড়ায়।
আবার কখনও মনের অজান্তে অন্ধকার পথে পা বাড়ায় ছাত্রীরা। একসময় ফেরার পথ খুঁজে পায়না তারা। বিসর্জন দেয় সতীত্ব। এসব ঘটনার অধিকাংশই প্রকাশ পায় না। লোকলজ্জার ভয়ে নিরবে চোখের জলে বুক ভাসায় শিক্ষকের লালসার শিকার ছাত্রীরা। আবার কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ পেলেও এনিয়ে কিছুদিন হৈ-চৈ এর পর তা ধামাচাপা পড়ে যায়। বিচার হয়না অধিকাংশ ঘটনার। এমন কিছু বিষয় নিয়েই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
ঢাবির শিক্ষকরা কখনো বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে আবার কখনো পরীক্ষায় পাশ করানোর কথা বলে অথবা নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে অশোভনীয় কাজ করছেন।
কার্য উদ্ধারের পর বিয়ে করতে অস্বীকার করলে অনেক সময় ছাত্রীরা তার সহপাঠিদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন প্রশাসন পর্যন্ত জানানো হয়। কিন্তু লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনা।
এত গেলো শিক্ষক আর ছাত্রীর কথা। নতুন করে সংযোজিত হয়েছে, মেয়ে-মেয়ে সহবাসের কথা। অর্থাৎ পশ্চিমাদের হার মানিয়েছে একজন ছাত্রীকে আর একজন ছাত্রীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হওয়ার বিষয়টি। এ ধরণের ঘটনার শিকার হয়েছেন ঢাবি রোকেয়া হলের ৩য় বর্ষের এক শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘হলের এক বড় আপুর (মাসুমা-ছদ্মনাম) সঙ্গেই আমরা আরো দুজন থাকতাম। তিনজনের রুমে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমরা দুজনই থেকেছি। রুমমেট চলে যাওয়ার সুযোগে মাসুমা আপু প্রতি রাতেই আদর করতো। আমি প্রথমে বিষয়টিকে পাত্তা দেইনি। কিন্তু একদিন জোড় করে তিনি আমাকে রুমের মধ্যে লাউড স্পিকারে গান ছেড়ে উলংঙ্গ করে ফেলে। এরপর আমার আর কিছুই করার ছিল না। এখনো মাঝে মাঝে আমাকে ঐ আপুকে এভাবে সময় দিতে হয়। এটাই হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আমার অন্যতম কষ্টের অর্জনগুলোর একটি হয়ে থাকবে সারা জীবন। এ কথা লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারছি না, সইতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আপু আমাকে যেহেতু তার রুমে থাকতে দিচ্ছে তাই আর কিছুই বলার নাই।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষক যৌন কেলেংকারীর দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিও নখদন্তহীন বাঘে পরিনত হয়েছেন। ফলে চরিত্রহীন শিক্ষকের বিচার না পেয়ে অনেকে ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছেন। অনেকের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে তা ভেঙ্গে গেছে। আবার কেউ কেউ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে।
সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে পারফরর্মেন্স এ্যান্ড থিয়েটার স্ট্যাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন। কিন্তু সাদা দলের এই শিক্ষকের দাবি তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একটি মহল চক্রান্ত করে তার বিরুদ্ধে এধরণের নাটক সাজিয়েছে।
জানা যায়, গত ৫ বছরে যৌন কেলেংকারির সাথে অভিযুক্তদের কাউকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আবার কাউকে সাময়িক পাঠদানের বাইরে রাখা হয়েছে। এরপর ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায় কিন্তু বিচার আর হয় না। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার রিপোর্ট হিমাগারে চলে যায়। কিন্তু ইতিপূর্বে সাইফুল ইসলাম ছাড়া আর কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি।
সূত্র জানায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী একই বিভাগের শিক্ষক ড. কামাল উদ্দিনের বিরদ্ধে যৌন নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করলেও ওই শিক্ষক ফের যোগ দিয়েছেন। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়।
২০১০ সালে ট্যুারিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে আন্দোলনে নামেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
২০১০ সালে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. আবু মুসা আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে একই বিভাগেরই এক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন এক ছাত্রী।
২০১১ সালের প্রথম দিকে উর্দু বিভাগের প্রফেসর ড. ইস্রাফিলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে লিখিত আবেদন করেন ওই বিভাগেরই এক ছাত্রী। তার বিরুদ্ধে একই বিভাগের আরেক ছাত্রীরও একই অভিযোগ রয়েছে।
২০১১ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী-লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে। পরে ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
২০১২ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে। বিভাগের ছাত্রী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও বাইরের মেয়েদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, ছাত্রীদের বাসায় নিয়ে নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ উঠেছে পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের প্রফেসর ড. জাফর আহমেদ খানের বিরুদ্ধে।
২০১০ সালে উর্দু বিভাগের লেকচারার গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ছাত্রীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের।
২০১২ সালের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লেকচারার মাহমুদুর রহমান বাহালুলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ পাওয়া যায়।
একই বছর ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মো. সালাহউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন একই বিভাগেরই এক ছাত্রী।
গত বছরের ডিসেম্বরে আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. এটিএম ফখরুদ্দীন তার বিভাগের এক ছাত্রীকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রফেসর আমজাদ আলী বলেন, যারা এই অশালীন কাজ গুলোর সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে জাতি কখনো তাদের কাছে এটি আশা করেনা।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন বলেন, এ সকল অনৈতিক কাজের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে হাইকোর্টে ঢাবির এক ছাত্রীর করা রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান এটর্নি জেনারেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মাহবুব এ আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত বৈঠকই হয়নি। অনেকের কাছে জানানোও হয়নি তাদের দায়িত্বের কথা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও জানেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি কমিটি রয়েছে। . . . . . . . . .