নারায়ণগঞ্জে নূর হোসেন, যেকোনো সময় আদালতে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০১৫, ৯:২৪ পূর্বাহ্ণভারত থেকে ফেরার পর নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নূর হোসেনকে হস্তান্তর করার পর তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পথে রওনা দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তাকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে তাকে রাখা হয়েছে। আজ যে কোনো সময় তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। এ লক্ষে আদালত পাড়ায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের নবনিযুক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন আদালতে এসে পৌঁছেছেন।
এর আগে, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নূর হোসেনকে বেনাপোল থেকে ঢাকার পথে রওনা দেয়। সকাল ৮টায় নারায়ণগঞ্জে পৌঁছলে নূর হোসেনকে বহন করে আনা গাড়িটি বুঝে নেয় পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।
গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিবিজির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। তাকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আসার পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের দমদম কারাগার থেকে তাকে নিয়ে পুলিশ পেট্রাপোল বন্দরের দিকে রওনা হয়। বেনাপোল বন্দরে বিএসএফ ও বিজিবির মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের একদিন পরই নূর হোসেনকে ফেরত দিল ভারত।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়। গতবছর ১৮ আগস্ট নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম এবং খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ।
নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী গত ১৬ অক্টোরবর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি করে দেন।
কে এই নূর হোসেন: ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন ১৯৯২ সালে বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার সভাপতি হন। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, উচ্ছেদে বাধা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।
. . . . . . . . .