দোয়ারাবাজারে মিশ্র ফল চাষি উদ্দ্যোক্তা নুরুল ইসলাম ফালুর’ সফলতার গল্প
সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৩, ১:১১ অপরাহ্ণশুরুটা ৬ টি লিচু চারা দিয়ে। এরপর একে একে কমলা, আপেল,আঙ্গুর,কুল, আম, জামরুল, কদবেল, লেবু,তালসহ ১০০ অধিক জাতের ফল লাগিয়েছেন নিজের বাগানে। সব ফল আবাদেই পেয়েছেন সাফল্য। মিশ্র ফল আবাদ করে সফল এ কৃষক নুরুল ইসলাম ফালু (৫৫)। এখন তিনি বাগান থেকে বছরে একেক জাতের ফলই বিক্রি করেন লাখ লাখ টাকায়। ফল বিক্রি করেই তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি স্বাবলম্বি হয়েছেন।
নুরুল ইসলাম ফালু,দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী’র সন্তান। পাইকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মাঠে ফসলি জমি ও পুকুরের পারে উঁচু জমিতে বিষমুক্ত পদ্ধতিতে ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন নুরুল ইসলাম ফালু । চার একর জমিতে গড়ে তুলেছেন আপেল,আঙ্গুর,কমলা,মালটা,সফেদা,আনারস,নাশপাতি,ডার্গন,শরিফা,শেহরি,ফল,চায়নাকমলা,লিচু,লেবু,বেল,লটকন-,কটবেল,আতাফল,আম,রামবুটান,কাঠাল,নারিকেল,পেয়ারা,বেলেম্বু,বল,জামরুল,ডালিম,করমছা,তেতুল,তাল,আমড়া,বারো মাসি কাঁঠালসহ ১০০ অধিক প্রজাতীর ফল।
নুরুল ইসলাম ফালু জানান, ১৯৯৩ সালে ৩০ বছর বয়সে ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে জান তিনি। তখন ফুফার লাগানো ফলের বাগান দেখে আগ্রহ স্বরূপ প্রথমে ৬টি লিচু চারা রূপন করেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে ফল চাষে আসক্ত হয়ে নিজের কয়েকশতক জমিতে আনারাস,আপেল,আঙ্গুর,মালটা,আম,কাঁঠালসহঅনেক প্রজাতীর ফল চাষ শুরু করেন। পরের বছরই গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর তেমন লাভ না হলেও তারপরের বছর লাভবান হই। ফলকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করি।
তিনি আরোও বলেন, ১৯৯৫ সালে আমার বাগানে ফলের বাম্পার ফলন হয়। প্রায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর ফল ধরেছিল। তখন পুকুরের মাছসহ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ফল বিক্রি করি।এর পর থেকে প্রতি বছরই ফলের চারা ও জাত বাড়াতে থাকি এতে প্রতি বছরই লাভের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ১৩০ টি লিচু গাছসহ ১০০ প্রজাতীর অধিক ফলের গাছ রয়েছে,রয়েছে ১ শতাধিক ঔষুধি গাছ, মাছের পুকুর, হাস ও মুরগি,এখন প্রতি বছর মিশ্র ফলের বাগান থেকে প্রায় ৭-৮লাখ টাকা আয়। গত বছর বন্যার কারনে ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুকুরের সব মাছ বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।আশা করছি এবছর আয়ের মাধ্যমে গতবছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।
এছাড়াও ফালু মিয়া নিজ হাতে ১০ টি তাল গাছের চারা লাগিয়ে, নিজে তাল খেয়েছেন ও তাল গাছের কাট দিয়ে নিজ হাতে ঘরের ফার্নিচার তৈরি করেছেন।
তিনি কিছুটা হতাশ হয়ে বলেন, বাজারে কীটনাশক, সার সহ কৃষি কাজে ব্যবহৃত সকল জিনিসের দাম বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বাগানের মালিক ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুনেছি কৃষি অফিস হতে লিচু চাষিদেরকে সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে সহযোগিতা করেন। আমরা তার দেখা পায়না। আমাদেরকে যদি সরকার সহযোগীতা করেন আমরা আরও বেশি ফল ফলাতে পারব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, নুরুল ইসলাম ফালু খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। সবাই উদ্যোগী হলে দেশে আর বেকারত্ব থাকবে না। কৃষি বিভাগ সকল চাষিদের সহযোগীতা করতে প্রস্তুত। আমরা উনার সাথে যোগাযোগ করে উপজেলা কৃষি অফিসে আনব।ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করব।
সিলেটসংবাদ/হান্নান