ছোটগল্প: রক্তিম ভালোবাসা

সুলেখা আক্তার শান্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ৬:১৩ অপরাহ্ণএকদিন এশার পড়ার টেবিল গুছিয়ে দিতে গিয়ে ওহিদার দৃষ্টি পড়ে বইয়ের মলাটে লেখা, আই লাভ ইউ সাব্বির। ওয়াহিদার ভুরু কুঁচকে যায়। এইটুকু পুচকি মেয়ে সবেমাত্র ক্লাস টেনে পড়ে, শুরু করে দিয়েছে প্রেম। সে দৃষ্টি রাখে মেয়ের উপর। মেয়ের জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান করতে থাকে। পেয়েও যায়। এশাকে দেখানো হয়। কিন্তু এশা বিয়ে করতে চায় না। সে সাব্বিরকে জানায়। সাব্বির তুমি একটা কিছু করো। সাব্বির কি করবে সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। সে বলে, ধৈর্য ধরো ছেলেপক্ষ দেখালেই বিয়ে হয়ে যায় না। এশাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। এশার মা ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এগিয়ে নেয় মেয়ের বিয়ের কথা। এশার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ছেলে অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন। এশা কোন কূলকিনারা করতে না পেরে ফুপুর কাছে চলে যায়। ফুপু তুমি একটা কিছু করো। মা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি এ বিয়ে করতে চাই না। আমি সাব্বিরকে ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না ফুপু। এশার এই অবস্থা দেখে রাবেয়াও ঘাবড়ে যায়! কি করবে বুঝতে পারছ না। সে এশাকে বুঝ দেয়। এশা বুঝ মানতে নারাজ। সে মরিয়া। ফুপু আমাকে মেরে ফেলো। আমি মরে যাই।
রাবেয়া বাস্তবতা বোঝাতে চেষ্টা করে। তুই আর সাব্বির সমবয়সী। এই বয়সে দু’জন সংসার পাতানো সম্ভব? মেয়েদের তাও সম্ভব, সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের বোধহয় সেভাবেই তৈরি করেছেন। এখন বিয়ে দিলে ছেলেটা তো দিশেহারা হয়ে পড়বে। মা, তোর কপাল ভালো। ভালো পাত্র জুটেছে। আগে পিছে চিন্তা না করে বিয়ে কর। দেখিস সুখী হবি। অস্ট্রেলিয়ায় থাকবি। সুন্দর দেশ। চাইনা আমি অস্ট্রেলিয়া, চাইনা কোনো সুখ স্বাচ্ছন্দ। আমি শুধু সাব্বিরকে চাই।
সাব্বির এসে মায়ের পা জড়িয়ে ধরে। মা তুমি ওকে যেতে দিও না। আমাদের দু’জনের বিয়ে দিয়ে দাও। দরকার পরে আমরা না খেয়ে থাকবো তাও আমরা একসাথে থাকব। রাবেয়া আবার বোঝাতে চেষ্টা করে। বাবা এসব আবেগের কথা। ভাব আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। এশার মা ওয়াহিদা এসে হাজির হয়। সাব্বিরকে বলেন, জীবন সাজাও ভালোবাসা এরকম অনেক আসবে। এতটুকু বয়স তোমার! সংসারের বোঝা বড় ভারী। এ বয়সে এতো বড় বোঝা বইতে পারবা না। না পারবা নিজে খেতে, না পারবা বউকে খাওয়াতে!
রাবেয়া বলেন, এই বয়সে বিয়ে করলে দাঁড়াবে কিভাবে? একটা ছোট মেয়ের জন্য ম্যাচিউর ছেলে আসে, সমাজ এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। অপরদিকে একটা ম্যাচিউর মেয়ে ছোট ছেলেকে বিয়ে করবে এটা অকল্পনীয় ব্যাপার! দুই কিশোর কিশোরীকে বাস্তবতা বোঝাতে অনেক উপমার আশ্রয় নেওয়া হয়। তোমরা দু’জন সমবয়সী। এই বয়সে তোমরা সংসার সাজাইয়া জীবন পাড়ি দিতে পারবানা! ওয়াহিদা বলেন, সাব্বির পড়ালেখা শেষ করুক আমরা ভালো মেয়ে দেখে ওর বিয়ে দেব।
যুক্তি তর্ক এবং বাস্তবতার কাছে অবশেষে সাব্বির ও এশা পরাজিত। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পত্রের সঙ্গে বিয়ে হয় এশার। কেউ শুনতে পায় না দুটি হৃদয়ের আত্মচিৎকার, কেউ দেখতে পায় না দুটি হৃদয়ের অদৃশ্য রক্তক্ষরণ। ভেঙে চৌচির হয়ে যাওয়া স্বপ্ন সৌধ। সাব্বির আর এশার নীরব চিৎকার মহাকালের স্রোতে হারিয়ে যায়। যদি বহন করার ক্ষমতা না থাকে হে বিধাতা তবে কেন দিয়েছিলে কৈশোর হৃদয়ে প্রেম ভালোবাসা, অনুভব আর অনুভূতি।
সাহিত্য/হান্নান