মইনুল হাসান আবির’র ছোট গল্প: একুশের দিন

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২১, ৪:৫৮ অপরাহ্ণমইনুল হাসান আবির:
ছোট বেলা থেকেই গুরুজনের মুখে শুনেছি আমাদের নাকি ভাষা আন্দোলনের হয়েছিল । ভিবিন্ন বইয়ে পড়েছি এই চির অম্লান একুশের কথা। আজ মঙ্গলবার স্কুলে নানা রকম আয়োজন চলছে । মিম সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে স্কুল ফাঁকি দেওয়ার অভ্যাস তার নেই। পড়াশুনায় ভালো তাই সব শিক্ষকরা তাকে চেনে। প্রথমে নাজিম স্যার ডেকে নিয়ে বলল মিম আগামিকাল প্রভাত ফেরিতে তুমি সবার সামনে থাকবা। এই বিষয়ে মিম একটু দ্বিধায় থাকলেও পরে ভেবে বলল আচ্ছা স্যার ঠিক আছে।
শহীদ মিনারটা নতুন করে রঙিন করা হলো মাঝখানের লাল রঙটা যেন রক্ত জবার মতো ফুটে আছে। আজ ক্লাস হবেনা তাই রহিম চাচার ঘণ্টি টিং টিং টিং করে বেঁজে উঠলো। ছুটি হয়েছে বুঝতে বাকি নেই। মিম বাড়িতে গিয়ে মাকে সব বলল, মিম খুশিতে আত্মহারা কাল প্রভাতে যেতে হবে। রাতে পড়াশুনা শেষ করে ভাবছে ফুল কোথায় থেকে আনব। আমাদের ফুল গাছটা তো বাবা কেটে ফেলেছে। তখন মাকে জিজ্ঞাসা করল মা কাল একুশে ফেব্রুয়ারি ফুল দিতে যাবো এখন কোথায় থেকে পাবো ফুল। মা বলল টেনশন করিস না তোর শান্তা দিদির বাড়িতে অনেক ফুল গাছ আছে আমি এনে দিব। যাই হোক এখন শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারব মায়ের কাছে ঘুমিয়ে গেল।
চারদিক আবছা আলোয় অন্ধকার বটে, ও… মা,..ও …মা উঠো উঠো বলেই মাকে জাগিয়ে তুলল। মা হতভম্ব হয়ে বলল কি হয়েছে মিম? মা সকাল হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি উঠো… ইস্! মেয়েটা এতো সকালে উঠে গেল। তাড়াহুড়া করে মা-মেয়ে শান্তা দিদির বাগানে হাজির মা দরজার টুক টুক করে ডাকলো এই শান্তা একটু উঠো, তোমার ফুল বাগান থেকে দু’চারটা ফুল নেবে মিম।
– জ্বি , নিয়ে যান খালা । দুটো রক্ত জবা, দুটো গাঁদা ফুল, নিয়ে বাড়িতে গেল মা-মেয়ে। মা আমি এখন রেডি হয়ে চলে যাচ্ছি সকাল ছ’টা বাজে। ফুল হাতে খালি পায়ে মিমকে ৫২-র ভাষা সৈনিকের আপন বোনের মতো লাগছে। স্কুলে সবাই একসাথে লাইনে দাড়িয়ে আছে নাজিম স্যারের কথা মতো মিম সবার সামনের লাইনে । প্রভাত ফেরিতে সকলে সুরে সুরে গান গাইছে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ” মিম এক তালে হাটছে আর গাইছে।
শহীদ মিনারে এসে সবাই একসাথে পুষ্পস্তবক অর্পণ করল। মিমকে শত মানুষের ভীড়ে ভাষা শহীদের নিষ্পাপ বোনের মতোই লাগছে। ১৯৫২ সালের এক নিষ্পাপ ছাত্র জনতার দাবির কথাগুলো কেমন ছিল ? এভাবে মিম ভাবতে লাগল। এখন তো স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে সেখানে অভিনয় করতে হবে তাই বাসায় গিয়ে হালকা খাবার খেয়ে রেডি হয়ে গেল স্কুল মাটে। পড়েছে রঙীন শাড়ি চোখে চশমা চুলগুলো পাউডারে সাদা করা এ যেন ভাষা শহীদদের মা জননী এসে হাজির। স্টেজ শো ছোট হলেও মিম পাকানামিতে বেশ বড়। কই গেল আমার ছেলে রফিক, জব্বার, সালাম আয় ফিরে আয় আমার বুকে এভাবে ডাক শুরু করল । হঠাৎ আর একজন ছেলে এসে হাজির মা এইতো আমি রফিক বলছি আমার মুখের বুলি কেড়ে নিতে চায় ওরা। জানো মা আমার বুকে বুলেট দিয়ে আঘাত করেছে কিন্তু তারা জানেনা আমরা লাখো ভাই। হারতে শিখিনি। তাই বুকের রক্ত দিয়ে ভাষা কিনেছি। সারাদিন অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রতিটি বছর একুশ আসলে মিম শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে করে আর গানটা গেয়ে যায় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।