দক্ষিণ কোরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা, মৃত্যুশয্যায় কুমিল্লার ২ বন্ধু

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার দুই মেধাবী শিক্ষার্থী রাজিদ আয়মান ও হাসিবুল হাসান চৌধুরী। ছোটবেলা থেকে একই সঙ্গে স্কুলে যাওয়া, একই বেঞ্চে বসা, একই পোশাক পরা—সবকিছুতেই ছিল এক অদ্ভুত মিল। পড়াশোনায় দুজনই সমান মেধাবী। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫।
এদিকে রাজিদ ও হাসিবুলের সহপাঠী ও শিক্ষকরা আইসিউতে ভর্তি থাকা দুজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে দোয়া চেয়েছেন। আবেগঘন পোস্টে তারা লেখেন, ‘ওরা দুজন সবসময় একসঙ্গে থাকত। এখনো একই সঙ্গে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছে, জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
রাজিদ ও হাসিবুলের বন্ধু আহমেদ শুভ বলেন, ‘তাদের শুধু মেধা নয়, স্বপ্নও ছিল একই রকম। ছোটবেলা থেকেই রাজিদ ও হাসিবুল ছিল ভদ্র, মেধাবী ও পরিশ্রমী। তারা দুজনে একই স্কুলে পড়ত, একই পোশাক পড়ত। ক্লাসে কেউ ফাস্ট বয় কেউ সেকেন্ড বয় থাকত সব সময়ই। ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন ৫ পাওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাবে এমন কথা আমাকে বলছিল। তারা দুজনই পরিবারকে না জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তির আবেদন করে এবং একই সঙ্গে কোরিয়ান ভাষা শিখে। পরে পরিবার তাদের উচ্চশিক্ষায় বাধা না হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পাঠায়।’
আহতদের স্বজনরা জানান, ওনজুর হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা ব্যয় প্রতিদিনই বাড়ছে। পরিবারের পক্ষে এ বিপুল ব্যয়ভার বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দূর দেশে চিকিৎসার জটিলতা, অর্থনৈতিক চাপ এবং মানসিক যন্ত্রণায় পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
রাজিদ আয়মানের বাবা স্কুল শিক্ষক নান্নু মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষায় বিদেশে লেখাপড়া করবে। দুই বন্ধু উচ্চ শিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংডং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ভর্তির আবেদন করে। মেধা তালিকায় সেখানে চান্স পাওয়ার পর আমি অনেক কষ্টে টাকা ম্যানেজ করে তাকে সেখানেই পাঠাই। গত মঙ্গলবার রাতে স্কুটি দুর্ঘটনায় তারা দুজনই আহত হয়ে এখন হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি। তার এখনো জ্ঞান ফিরেনি। সেখানে তাদের সহপাঠিদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমি আমার ছেলের জন্য সবার নিকট দোয়া চাই। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরায় দেন।’
হাসিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘রাজিদ ও হাসিবুল মঙ্গলবার রাতে ওনজু শহরের একটি বাজারে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার পথে শিহাব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের অপর এক বড় ভাই তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্কুটিকে জোর করে তুলে। স্কুটি চালাচ্ছিলেন শিহাব। কিছুদূর যাওয়ার পর সড়কের স্পিডব্রেকারে (গতিরোধক) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। পরে পুলিশ এসে তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আমার ছেলে ও তার বন্ধু এখন মৃত্যুশয্যায়, ৮দিন পার হলেও তাদের কারো জ্ঞান ফেরেনি। তার মা বাসায় কান্নাকাটি করছে, জানি না ছেলে বেঁচে ফিরবে কিনা। আমার ছেলে ও তার বন্ধুর জন্য আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’