বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (৩১ জুলাই) স্থানীয় সময় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস এক ঘোষণায় এ সিদ্ধান্ত জানায়। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের ওপর নতুন বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে প্রকাশিত এ তালিকায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ রয়েছে। বিশ্ববাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক মহল।
হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, যেসব দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির তালিকা: আফগানিস্তান ১৫%, আলজেরিয়া ৩০%, অ্যাঙ্গোলা ১৫%, বাংলাদেশ ২০%, বলিভিয়া ১৫%, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ৩০%, বতসোয়ানা ১৫%, ব্রাজিল ১০%, ব্রুনেই ২৫%, কম্বোডিয়া ১৯%, ক্যামেরুন ১৫%, চাদ ১৫%, কোস্টারিকা ১৫%, আইভরি কোস্ট (কোত দিভোয়ার) ১৫%, কঙ্গো (গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র) ১৫%, ইকুয়েডর ১৫%, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ১৫%, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (>১৫% হারে শুল্কযুক্ত পণ্যে) ০%, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (<১৫% হারে শুল্কযুক্ত পণ্যে) ১৫% – নির্ধারিত হার, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ১০%, ফিজি ১৫%, ঘানা ১৫%, গায়ানা ১৫%, আইসল্যান্ড ১৫%, ভারত ২৫%, ইন্দোনেশিয়া ১৯%, ইরাক ৩৫%, ইসরায়েল ১৫%, জাপান ১৫%, জর্ডান ১৫%, কাজাখস্তান ২৫%, লাওস ৪০%, লেসোথো ১৫%, লিবিয়া ৩০%, লিচেনস্টেইন ১৫%, মাদাগাস্কার ১৫%, মালাওই ১৫%, মালয়েশিয়া ১৯%, মরিশাস ১৫%, মলদোভা ২৫%, মোজাম্বিক ১৫%, মিয়ানমার (বার্মা) ৪০%, নামিবিয়া ১৫%, নাউরু ১৫%, নিউজিল্যান্ড ১৫%, নিকারাগুয়া ১৮%, নাইজেরিয়া ১৫%, নর্থ ম্যাসেডোনিয়া ১৫%, নরওয়ে ১৫%, পাকিস্তান ১৯%, পাপুয়া নিউগিনি ১৫%, ফিলিপাইন ১৯%, সার্বিয়া ৩৫%, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০%, দক্ষিণ কোরিয়া ১৫%, শ্রীলঙ্কা ২০%, সুইজারল্যান্ড ৩৯%, সিরিয়া ৪১%, তাইওয়ান ২০%, থাইল্যান্ড ১৯%, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ১৫%, তিউনিসিয়া ২৫%, তুরস্ক ১৫%, উগান্ডা ১৫%, যুক্তরাজ্য ১০%, ভানুয়াতু ১৫%, ভেনেজুয়েলা ১৫%, ভিয়েতনাম ২০%, জাম্বিয়া ১৫%, জিম্বাবুয়ে ১৫%।
এ ছাড়া আফ্রিকার বহু দেশের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যায় বলা হয়, কিছু দেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বা স্বল্প শুল্ক সুবিধা পেলেও পাল্টা বাজার সুবিধা দেয়নি। ‘ফেয়ার ট্রেড’ বা ন্যায্য বাণিজ্য নীতিমালা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, “এটা কিছুটা স্বস্তির। আমাদের শুল্ক বৃদ্ধির হার ভারতের চেয়ে কম। তবে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যার প্রভাব বিক্রিতে পড়তে পারে।”
বিশ্লেষকদের মতে, পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের নতুন করে বাজার কৌশল বিবেচনা করা জরুরি হয়ে পড়বে।বিশ্বব্যাপী ‘ফেয়ার ট্রেড’ নীতিমালা নিশ্চিত করতে এবং কিছু দেশ থেকে পণ্যের অনিয়ন্ত্রিত প্রবাহ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র এই শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করেছে। হোয়াইট হাউস বলছে, কিছু দেশ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক সুবিধা ভোগ করলেও প্রতিদানমূলক বাজার প্রবেশাধিকার দেয়নি।
এদিকে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল প্রথম দিন (মঙ্গলবার) ছয় ঘণ্টা, দ্বিতীয় দিন আট ঘণ্টা আলোচনার পর বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিন দুই ঘণ্টা আলোচনা করেছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। আর বাংলাদেশের দিক থেকে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬২৬ কোটি ডলার। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এ ঘাটতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ রয়েছে বাংলাদেশের। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে পাঁচ বছর ধরে (বছরে ৭ লাখ টন করে) ৩৫ লাখ টন গম আমদানি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিও বাংলাদেশ বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে আমদানি করা হবে ২৫টি উড়োজাহাজ। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে তুলা, সয়াবিন বীজ, ডাল ইত্যাদি পণ্য আমদানি বাংলাদেশ বাড়াবে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।