সিলেট-৩ আসনে সক্রিয় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৫, ৯:৫৮ অপরাহ্ণদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও আগামীতে সরকার গঠনের প্রধান দাবিদার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনি মাঠে সবচেয়ে বেশি সরব। সারাদেশের মতো সিলেট-৩ আসনেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক নেতা। আগে থেকে যারা মাঠে ছিলেন তাদের বাইরেও অনেকে শুরু করেছেন নানামুখী তৎপরতা। অনেকে হাই কমান্ডের ‘ইশারা’ পেয়েও মাঠে নেমেছেন। বিদেশে থেকে যারা দলের জন্য ভূমিকা রেখেছেন তারাও একের পর এক পা রাখছেন দেশের মাটিতে। জানান দিচ্ছেন নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য আর প্রভাব প্রতিপত্তির। রাজনৈতিক সভা, সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত। তাদের এসব কার্যক্রম গোটা আসনে ভিন্ন আবহের সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনে রয়েছেন একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, বিএনপির আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি আব্দুল মুকিত, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্যপ্রার্থী এমএ হকের পুত্র ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান।
নির্বাচনী আসন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন ব্যানার, ফেষ্টুন, পোষ্টার ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থীরা তাঁদের প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন। পাশাপাশি তাদের কর্মী, সমর্থকদের মাধ্যমে দলীয় ও নিজস্ব কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় মিলাদ মাহফিল ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ঠ্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা সরব রয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আলহাজ¦ আব্দুল মালিক দেশে প্রত্যাবর্তন করে বিএনপির মহাসচিবকে নিয়ে জোরালো আওয়াজ দিয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আলোচনায় আসেন। ব্যারিষ্টার সালাম দলীয় ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী মাঠে সোচ্চার রয়েছেন।এভাবে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নিজ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসনের প্রতিটি হাট-বাজারে ৩১ দফার কর্মসূচী বাস্তবায়নে জনমত গড়ে তুলতে মাঠে নেমেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। জিয়াউর রহমানের গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচীর আদলে আদর্শ গ্রাম কাঠামো গড়ার কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে এসেছেন ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান। দলীয় ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন রাজপথ কাপানো ত্যাগী নেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল। বসে নেই যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি আব্দুল মুকিতও। তিনি ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের পতনের আগ থেকেই ঘনঘন দেশে এসে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত কিছুদিন আগেও তিনি দেশে এসে বিভিন্ন সভা, সমাবেশসহ নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিলেট-৩ আসনের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চান তিনি।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাইয়ে তিনটি বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রামে দেশ ও দলের যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয়ত, যিনি সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং এলাকার জনগণের কাছে একজন ভালো মানুষ হিসাবে সুপরিচিত। তৃতীয়ত, ভোটের রাজনীতিতে যিনি তার নির্বাচনি এলাকায় বেশি জনপ্রিয়। তবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণ প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পেতে পারে। আবার দলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নবীন-প্রবীণের চমৎকার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। অপরদিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এছাড়াও মিত্রদের জন্য কিছু আসনও সেক্রিফাইস করবে। থাকবে নানান চমকও।
আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি, যদিও আগের রাতে ভোট হওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরেও আসে। প্রতিকূল পরিবেশে অংশ নেওয়া ওই নির্বাচনে একটি আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছিল দলটি। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমনটি করা হবে না। দেশ ও দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার, সততায় উত্তীর্ণ এবং জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তিনিই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। প্রাধান্য পাবে তরুণরা, অপকর্মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে এবং মাঠে গ্রহণযোগ্যতা নেই এমন ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন না, দুর্দিনে যারা দলের সঙ্গে ছিলেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গোটা আসনে প্রার্থীদের তৎপরতা বাড়ছে। এতে আশাবাদী হয়ে উঠেছে আসনের প্রতিটি ভোটার। দীর্ঘ ১৭ বছরের ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগন আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এক্ষেত্রে তরুন ভোটারদের উচ্ছাস একটু বেশি। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, সিলেটের সবকটি আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তারা স্ব এলাকায় কাজ করছেন। এর মাধ্যমে আমাদের দল তৃণমূলে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। আর মনোনয়নের বিষয়টি দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে হবে। সেখানে আমাদের সকলের চেষ্টা থাকবে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া। যাতে বিজয় নিশ্চিত হয়। আমি আশাবাদী আগামী নির্বাচনে সিলেটের সবকটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা জয়লাভ করবে।
রাজনীতি/হা