সীসা দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাংবাদিকদেরকে নিয়ে কর্মশালা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ৪:২৪ অপরাহ্ণসীসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সীসা দূষণ সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের বর্তমান সীসা দূষণের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য সিলেট জেলার সাংবাদিকদের কে নিয়ে ইউনিসেফ সিলেট ফিল্ড অফিসের সহযোগিতায় ও সিলেট জেলা সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে এক কর্মশালা বুধবার সিলেটের এক অভিজাত হোটেলের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা.মনিসর চৌধুরী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ সিলেটের চিফ অফ ফিল্ড অফিসার আফরোজা ইসলাম, সিলেট জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.জন্মেজয় দত্ত, ইউনিসেফ সিলেট ফিল্ড অফিসের স্বাস্থ্য অফিসার ডা.মির্জা ফজলে এলাহী।
সিভিল সার্জন সিলেট অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার স্বপ্নীল সৌরভ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ডা. স্নিগ্ধা তালুকদার ও ডা. তনুশ্রী তালুকদার। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বে প্রতি তিন জন শিশুর একজন সীসা দূষণের শিকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৬০ শতাংশ এবং প্রায় পৌনে তিন কোটি ৬০ লক্ষ শিশু রক্তে সীসার মাত্রা ৫ ug /dl মাইক্রগ্রাম পার ডেসিলিটারের বেশি। আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ আক্রান্ত দেশ।
এদিকে ইউনিসেফের সহায়তায় আইসিডিডি আরবির মাধ্যমে ২০২২ সালে সিলেটের ২৪৮ জন সহ টাঙ্গাইল, খুলনা ও পটুয়াখালীর সর্বমোট ৯৮০ জন শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষায় প্রত্যেকের নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রার সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায় যেখানে ঘর মাত্রা ছিল ৫.৬৩ ug/dl. মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার চেয়েও বেশি। অনুষ্ঠানে জানানো হয় সীসার উৎস সম্পর্কে আরো জানার জন্য এবছর এই বাচ্চাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, পণ্য ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং আগামী বছর পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করা হবে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি সীসা দূষণের ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হয় জা নিয়ে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অনেক ক্ষেত্রেই আর নিরাময় করা সম্ভব নয়। এর ফলে শিশুদের নানান শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আইকিউ-কমে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এতে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়ে শিশুরা লেখাপড়ায় দুর্বল হয় যা ভবিষ্যতে তাদের অনেক আগ্রাসী করে তুলে ও পরিপূর্ণ বিকাশের সক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বুদ্ধি ভিত্তিক পঙ্গুত্বের পেছনে ৭০ ভাগ সীসা দূষণ দায়ী বলে জানানো হয়। এছাড়া মাত্রাতিরক্ত সীসার উপস্থিতি গর্ববতী মহিলার পাশাপাশি তার গর্ভের ভ্রুণকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে বাচ্চার ওজন কম হওয়া, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া এমনকি মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া সীসা দূষণের ফলে বড়দের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি, হার ও মাংসপেশির ব্যথা সহ নানান শারীরিক মানসিক সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে কর্মশালায় জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ও সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী সহ সিলেটে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
সিলেট/আবির