হাওর পাড়ের কন্যা ফারজিনার হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৮ অপরাহ্ণযে পরিবারে তিন বেলা ভাত খাওয়াই কষ্টের, নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অভিনয়ের শিক্ষা, ন্যূনতম প্রশিক্ষণ, নেই নিজেদের বসত বাড়ি, থাকেন নানার বাড়িতে ছোট খড়ের ঘরে; ভূমিহীন খুব অসহায় পরিবারে বেড়ে ওঠা চার বছরের মেয়েটিই হাওর পাড়ের জীবন জীবিকার অন্বেষণে কত কষ্ট করতে হয় তা টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কন্যা ফারজিনা আক্তার সাবলীল ভাবে চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জিতেছে নিয়েছে শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর থেকে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সারা দেশে আলোচিত আর প্রশংসায় ভাসছে ফারজিনা। তার নিজ গ্রাম ছিলাইন তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দারাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ফারজিনা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাংগুয়ার হাওর পাড়ের ছিলানি তাহিরপুর গ্রামের আবু সায়েম ও আফিয়া আক্তারের বড় মেয়ে। তার ছোট এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। গ্রামেই স্থাপিত জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ফারজিনা প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা পেশায় কৃষক আর মা একজন গৃহিণী। পরিবারটির কোনো সহায় সম্পদ নেই বলে জানিয়েছেন ফারজিনার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হাদিজ্জামান।
তিনি আরও জানান, এত বড় পুরস্কার পেলেও ঘরে রাখার মত কোনো সুযোগ নেই কারণ বাড়ি-ঘর নেই জমি জমাও নেই। খুবেই অসহায় পরিবার। নানা শাহপরানের বাড়িতে একটি কুড়ে ঘরে বাস করছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাংগুয়ার হাওর ও পাটলাই নদীর তীরবর্তী ছিলাইন তাহিরপুর গ্রামটিতে বর্ষায় টাংগুয়ার হাওরের উত্তাল ঢেউ ও ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি খরস্রোতা পাটলাই নদীর স্রোতধারায় প্লাবিত হয় এই গ্রামের পাশ দিয়ে। চলচ্চিত্র পরিচালক ছবিতে হাওরবাসীর জীবন ও প্রকৃতি নিয়ে গল্পের কাহিনীতে ছবির মূল অংশ শুটিং করছে টাংগুয়ার হাওর ও পাটলাই নদীর তীরবর্তী এই গ্রামটিতে। গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ ও হাওরে মাছ ধরা। আজও লাগেনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, স্যানিটেশনসহ আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া গ্রামটিতে। ছবিটির পুরো গল্প জুড়ে রয়েছে হাওরবাসী একমুঠো ধান, তিন বেলা পেটপুরে খাবারের জন্য কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে গ্রামের দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের জীবন সংগ্রামের কাহিনী,বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার কষ্টের কথা আর
বেঁচে থাকেন তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা আহমেদ কবির জানান, ফারজিনা আমাদের হাওর পাড়ের গর্ব। এত বড় পুরস্কার পাবে হাওরপাড়ে কোনো সন্তান তাও আবার হাওরের মানুষদের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্য তা কোনো দিন ভাবিনি। আশা করব সরকারসহ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া আমাদের হাওর পাড়ের সন্তান ফারজিনাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন যাতে করে আগামী দিনগুলোতে হাওর পাড়ের মানুষের জন্য সম্মান আরও বয়ে আনতে পারে।
ফারজিনার পিতা আবু সায়েম জানান, শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে আমার মেয়ে প্রথমে আমি ভাবতেও পারেনি এত বড় পুরস্কার আমার মেয়ে পাবে। মেয়ের জন্য আমি গর্বিত, এত প্রশংসা এত সম্মান আমি আমার পরিবার পাব কল্পনাও করেনি কোনো দিন।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আসাদুজ্জামান বলেন, হাওরপাড়ে অসংখ্য ফারজিনা আক্তার বাস করে তাদের জন্য নিরন্তর শুভকামনা রইল। অভাব অনটন দারিদ্র্য কোনটি শিশুদের মেধা বিকাশের অন্তরায় হতে পারে না। ফারজিনা এটি প্রমাণ করে দিয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ এ সেরা শিশুশিল্পীর (বিশেষ বিভাগ) এ পুরস্কার প্রাপ্ত ফারজিনা আক্তার ও তার পরিবারকে সহায়তার চেষ্টা ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়েছে। ফারজিনা এগিয়ে যাক কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন তার চলার পথ রুদ্ধ করতে না পারে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, হাওর পাড়ের মানুষের সংগ্রামী জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে আমার হাওর পাড়ে সন্তান ফারজিনা শিশু শিল্পী হিসেবে পুরস্কার জিতে নিয়েছে তার হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। যা আমাদের হাওরবাসীর জন্য গৌরবের। অভিনন্দন ফারজিনা আক্তারকে।
সিলেট/আবির