ইশারায় ভাষায় কোরআন শিখছে শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুরা

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০১ অপরাহ্ণআজ আন্তর্জাতিক ইশারা ভাষা বা সংকেত ভাষা দিবস। প্রতিবছর ২৩ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়। ২০১৮ সাল থেকে দিনটির প্রথম উদযাপন শুরু হয়। এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘ইশারা ভাষা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে’।
বিশ্ব বধির সংঘের প্রস্তাবে ২০১৮ সাল থেকে জাতিসংঘ কর্তৃক ২৩ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। কারণ সেই দিন বধিরদের নিয়ে কাজ এই সংঘটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দিবসটি উদযাপনের পাশাপাশি ইশারা সপ্তাহ পালন করা হয়।
পৃথিবীতে প্রায় সাত কোটির বেশি বধির মানুষ রয়েছে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস করেন। তাই এক্ষেত্রে সাংকেতিক ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ৮০ শতাংশের মানুষের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন, যা খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে সারাবিশ্বের ইশার ভাষা বিভিন্ন ধরনের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় আমেরিকান ইশারা ভাষা (এএসএল) প্রচলিত এবং যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ ইশারা ভাষা (বিএসএল) প্রচলিত।
পবিত্র কোরআন পাঠ করা ও মুখস্থ করা সব মুসলিমের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সুস্থ-সবল ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সবাই অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যাদের আমি কিতাব দান করেছি তারা তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করে, তারাই তাতে বিশ্বাস করে। আর যারা এটা প্রত্যাখ্যান করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২১)
কিন্তু অনেক শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তা মুখস্থের সুযোগ পায় না। বিপুল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে একটি আবাসিক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন ইন্দোনেশিয়ান আলেম আবদুল কাহফি। বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশের যোগিয়াকার্তা শহরে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইশারা ভাষায় পবিত্র কোরআন ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা পাঠদান করানো হয়।
রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটির নাম দারুল আশোম। বর্তমানে এ মাদরাসায় ১১৫ শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের বয়স সাত বছর থেকে ২৮ বছর। তাদের পাঠদান করাচ্ছেন ১২ শিক্ষক। এ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের মধ্যে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটবে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
আবদুল কাহফি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থীর তুলনায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান খুবই সীমিত। সাধারণত ৮ বা ৯ বছর বয়স থেকে তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। কারণ তারা স্কুলে ইসলামী জ্ঞানের ভালো পাঠদান পায় না। কিন্তু সমপ্রতি এ মাদরাসার প্রতি তাদের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে। ’ এদিকে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সূত্রমতে, ইন্দোনেশিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে তিনজন স্কুলে যেতে সক্ষম হয়।
সাধারণত পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করতে শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের পাঁচ বছর সময় লাগে। ইতিমধ্যে পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা হিফজ সম্পন্ন করেছে মুহাম্মদ ফরহাদ নামের ১০ বছর বয়সের এক শিক্ষার্থী। এখন সে পুরো কোরআন না দেখেই পড়তে পারে। ভবিষ্যতে সে অন্যদের কোরআন শেখাতে চায়।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় কয়েক হাজার আবাসিক মাদরাসা (ইসলামিক স্কুল)-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্কুল রয়েছে। দেশটির অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণের একমাত্র উপায়।
সূত্র : রয়টার্স
ধর্ম-দর্শন / এ