বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উত্সবও পালন করলাম বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ৫:৪৩ অপরাহ্ণ
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
আমরা মুজিববর্ষ পালন করেছি। এ বছর শুরু হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন। প্রয়াত বন্ধু সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মৃত্যুর আগে আশা প্রকাশ করেছিলাম, তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন দেখে যাবেন। তিনি পারেননি। আমি পেরেছি। এটাই আমার গর্ব। যে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, সেই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তি দেখে গেলাম। বঙ্গবন্ধুর মতো ঐতিহাসিক পুরুষের সাহচর্য পেয়েছি। তার জন্মশত বার্ষিকীর উত্সবও পালন করলাম। এর চাইতে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে। সৈয়দ শামসুল হকের মতো আমার বহু বন্ধুই এই সৌভাগ্য লাভ করেননি। বার্ধক্যের কারণে অথবা কোভিড-১৯-এর কবলে পড়ে তারা দুটি ঐতিহাসিক উত্সব দেখে যেতে পারেননি। মৃত্যু তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে দেয়নি।
হাসিনা সরকার মুজিববর্ষ পালনের যথাযোগ্য ব্যবস্থা করেছিলেন। করোনা মহামারি এই উত্সব পালনকে ক্ষুণ্ন করেছে। অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় এই উত্সব দুটি পালিত হওয়ায় এর নানা সীমাবদ্ধতা দেখা গেছে। মুজিব বা বঙ্গবন্ধু বলতে একটি ব্যক্তি নন, একটি আদর্শকে বোঝায়। মুজিববর্ষ পালনে ব্যক্তিকে বড় করে তুলে ধরা হয়েছে। তার আদর্শকে নয়।
এটা হয়েছে জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলো প্রণয়ন ও পরিচালনায় আমলাদের একক কর্তৃত্ব থাকায়। বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অনুষ্ঠান পরিচালনার কমিটিগুলোতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। তাদের কোনো কিছুতে ডাকা হয়নি। তাদের পরামর্শও চাওয়া হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুকে মাটি ও মানুষের ঊর্ধ্বে একজন মহাদেবতা মনে হয়েছে। তিনি যে মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন এবং তাদের স্বার্থ ও অধিকারের জন্য সারাজীবন যুদ্ধ করে গেছেন—এই সত্যটি কোথাও ফুটে ওঠেনি।
একটা গল্প বলি, ইন্দিরা গান্ধী যখন ক্ষমতায়, তখন তার মনে হলো তার দাদু বা পিতামহ মতিলাল নেহেরুর জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করে পালন করা দরকার। জওয়াহের লালের বাবা মতিলাল নেহেরু ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহচরদের একজন। মৃত্যুর পর তার নাম ধীরে ধীরে বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছিল। ইন্দিরা চেয়েছিলেন সেই নামটিকে শুধু ইতিহাসে নয়, জনগণের স্মরণে তুলে আনতে বড় করে।
ইন্দিরার ইচ্ছার কথা জেনে বড় বড় আমলারা তত্পর হয়ে উঠলেন। মতিলালকে তারা এমনভাবে তুলে ধরার ব্যবস্থা করলেন, যাতে মনে হতে পারে মতিলাল নেহেরুই হচ্ছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নায়ক। আর সকলেই তার কাছে গিনিপিগ। ইন্দিরা আমলাদের পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। তিনি বেশ কয়েকজন সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অনুষ্ঠান প্রণয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তাদের পরামর্শ মেনে কাজ করার নির্দেশ দেন আমলাদের।
আমার ধারণা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী পালনে দেশের সব সুধীজনের সহযোগিতা ও সম্পৃক্তরা চেয়েছিলেন। তাই অনুষ্ঠান পরিকল্পনার কমিটিতে অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের নাম ছিল। এমনকি আমার মতো অভাজনেরও নাম ছিল। কিন্তু কমিটির নেতৃত্ব ছিল এক আমলার হাতে। তিনি কমিটির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কারো পরামর্শ গ্রহণ করেছেন বলে আমার জানা নেই। বরং প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিজেকেও বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরার ব্যাপারে আমলাদের একটা বড় ভয় আছে। তার কারণ, ব্রিটিশ আমলে তৈরি জনশত্রু আমলাতন্ত্র বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। তার বাকশাল ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র উচ্ছেদ করে প্রশাসনের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শাসন প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশে ব্রিটিশ আমলের জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়েছিল। কিন্তু জেঁকে বসেছিল বৃহত্ জোতদার ও ভূস্বামী প্রথা। এরা ছিল জমিদারদের চেয়েও বড় শোষক এবং অত্যাচারী। বস্তুত এদের মাধ্যমেই বৃহত্ পুঁজি ও আমলাতন্ত্র গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত তাদের শাসন ও শোষণ অব্যাহত রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু এই জোতদারদের উচ্ছেদের জন্য ভূমি দখলে রাখার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কৃষিতে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং জমির বহু ভাগাভাগির দরুন যে আইন তৈরি হয়ে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছিল, সেই ‘আইন’ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বহু অকর্ষিত জমি উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন।
পেশার ক্ষেত্রে শতাব্দী প্রাচীন শ্রেণিপ্রথা উচ্ছেদ করে উকিল, মুহুরি থেকে ব্যারিস্টার সবাইকে অ্যাডভোকেট এই পরিচয় প্রদান করেছিলেন। বিয়ের ক্ষেত্রে পণপ্রথা উচ্ছেদের ব্যবস্থা করেছিলেন। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তার মন্ত্রিসভায় নারীমন্ত্রী নিয়োগ ও তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি সম্পর্কে ব্রিটেনের বিশিষ্ট বাম দার্শনিক জ্যাক ওয়াদিস বলেছেন, ‘শেখ মুজিব কম্যুনিস্ট নন। কিন্তু তিনি তো কম্যুনিস্টদের চাইতেও বড় ধরনের শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।’
বঙ্গবন্ধুর এই দ্বিতীয় বিপ্লবের আদর্শ দেশের কায়েমি স্বার্থবাদীদের মনে ভীতি সৃষ্টি করেছিল। তাই দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, নব্য পুঁজি, ধর্মব্যবসায়ী এবং আমলাতন্ত্র তার বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর চাইতেও বাকশালের বিরুদ্ধে দুর্নাম ছড়ানো হচ্ছে বেশি। যে বাকশাল পদ্ধতি তিন মাসও দেশে পরীক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। সেই পদ্ধতিকে একদলীয় শাসন, এক ব্যক্তির শাসন বলে চালাবার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর এ চেষ্টা বেশি করেছে সিভিল ও মিলিটারি আমলাতন্ত্র।
এবার মুজিব বর্ষে আমলাতন্ত্রের ভূমিকাটা আমরা দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে মহাসমারোহে দেবতার আসনে বসিয়ে তার আদর্শের মূল কথা চেপে রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১০ জানুয়ারি, ১৯৭২) দিবস পালনের অনুষ্ঠানটি তো সস্তা হিন্দি ছবির অনুকরণে করতে গিয়ে দিবসটির আসল তাত্পর্য নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। একবার ওয়ার্ধায় (ভারত) ঘটা করে কংগ্রেস নেতারা গান্ধীজির জন্মদিবস পালন করছিলেন। গান্ধী অনুষ্ঠানে এসে বললেন, ‘তোমরা আমাকে দেবতার মূর্তি বানিয়েছো। কিন্তু আমি কোথায়?’ গান্ধী সেই অনুষ্ঠান ছেড়ে তার আশ্রমের খাদি সেন্টারে চলে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতাদের বলেছিলেন, ‘যদি আমাকে পেতে চাও এখানে এসো।’ সেখানে এক শর মতো নারী খাদিকর্মী চরকায় তুলা কাটছিল।
বঙ্গবন্ধু আজ যদি ফিরে আসতেন এবং তার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বিশাল শান-শওকতের সঙ্গে আমলাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে দেখতেন, তাহলে হয়তো গান্ধীর মতো বলতেন, ‘আমাকে তোমরা প্রাণহীন দেবতা বানিয়েছ। কিন্তু আমি কোথায়?’ এবারের মুজিববর্ষে তার আদর্শের রাজনৈতিক কর্মশালা, কৃষি কর্মশালা, শিক্ষা কর্মশালা, বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির কর্মশালার একটিও গড়ে উঠতে দেখা যায়নি। তার অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির আবশ্যকতা, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তার আদর্শের গুরুত্ব, তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি, তার শোষিতের গণতন্ত্র কী জন্য এখনো গুরুত্ব হারায়নি, বরং বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আরো বেশি প্রযোজ্য। তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
গান্ধী মারা গেছেন কবে, কিন্তু এখনো ওয়ার্ধা, বেলেঘাটা (কলকাতা), আহমেদাবাদ ও অন্যান্য গান্ধী আশ্রমগুলোতে বর্তমান যুগে গান্ধীর অহিংসার নীতি কতটা প্রযোজ্য, তা নিয়ে আলোচনা হয়। কয়েক বছর আগে আমি এবং ড. মুনতাসীর মামুন বেলেঘাটার গান্ধী আশ্রমে গান্ধীজির এক জন্মবার্ষিকী সভায় আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম। এই আশ্রমে শুধু চরখায় সুতা কাটাই হয় না, গান্ধী দর্শন নিয়ে রীতিমতো পণ্ডিতি আলোচনা হয়। তাতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ থাকে। গান্ধী আশ্রমকে কেন্দ্র করে খাদি ইন্ডাস্ট্রি পর্যন্ত গড়ে উঠেছে।
স্তাবকতা যে আমলাতন্ত্রের হাতে কত বড় অস্ত্র এবার মুজিববর্ষে তা প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, তার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দর্শন, তার অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, তার সমাজতন্ত্র ঘেঁষা অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য, তার শ্রেণিবিহীন সমাজ গঠনের স্বপ্ন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার বদলে মুজিববর্ষের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, স্তাবকতার বন্যায় এবার বাংলাদেশকে প্লাবিত হতে দেখা গেছে। আগামীকাল যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে, তাহলে এই স্তাবকের দলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধীরা এখনো ঘোট পাকাতে, স্বাধীনতার শত্রুরা এখনো জোট পাকিয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালাচ্ছে। তাদের দেশি-বিদেশি দোসরের অভাব নেই। এই অবস্থার মধ্যেও যে দেশে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে এবং এই সরকারের অধীনেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং আমি তা জীবনের অন্তিম সময়ে দেখে যেতে পারলাম, সেজন্য আমি গর্বিত এবং আনন্দিত।
কিন্তু এত আনন্দের মধ্যে দুঃখের কথাটাও বলতে চাই। আমলাতন্ত্রের দাপটে মুজিববর্ষে মুজিবকে খুঁজে পাইনি। কারণ মুজিব ছবি নন, ভাস্কর্য নন, স্মৃতিসৌধ নন, জাদুঘর নন, তিনি আদর্শ। একটি রাজনৈতিক মহাকাব্য। এই আদর্শ ও মহাকাব্য ছাড়া তাকে কেবল ছবি, ভাস্কর্যের মধ্যে পাওয়া যাবে না। তাকে হিন্দি ছবির গোলাকার আলোকবর্তিকা করে মঞ্চে টেনে আনলে তাকে ছোট করা হয়। যারা কোনো আদর্শের কথা বোঝে না, জানে না, সেই আমলাতন্ত্র স্তাবকতা দ্বারা বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন করতে চায় এবং করেছে। দুঃখের সঙ্গে বলব, মুজিববর্ষে প্রকৃত মুজিবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মার্কস বেঁচে আছেন মার্কসবাদের মধ্যে। গান্ধী বেঁচে আছেন তার অহিংস দর্শনের মধ্যে। ছবি বা ভাস্কর্যের মধ্যে নয়। জাদুঘরের মধ্যে নয়। পোলান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে কম্যুনিস্ট সরকারের আমলে লেলিনের ২২ ফুট উঁচু ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কম্যুনিস্ট শাসনের পতনের পর সেই মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়। তখন এক ফরাসি দার্শনিক বলেছিলেন, ‘তোমরা লেনিনের মূর্তি ভেঙেছ। কিন্তু লেলিন তো তার মূর্তির মধ্যে নেই। তিনি আছেন তার দর্শন ও আদর্শের মধ্যে। সেই লেলিনকে তোমরা হত্যা করবে কী করে?’
সেই কথাই সত্য হয়েছে। লেলিন পোলান্ডে নতুন করে বেঁচে উঠেছেন। লেলিনের নামে যে অসংখ্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং তাতে লেলিনের স্তাবকতা করে নয়, তার রাজনৈতিক দর্শন বিশ্লেষণ করে যে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে, তা পাঠ করে পোলান্ডের নতুন প্রজন্ম আবার মার্কসবাদ-লেলিনবাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বেলাতেও এই কথা সত্য। জীবিত মুজিবকে হত্যা করে এমনকি দেশে তার নামোচ্চারণ বন্ধ করে জিয়া-মোশতাকের দল তাকে বিনাশ করতে পারেনি। তিনি জীবিত মুজিবের চাইতেও শতগুণ শক্তিশালী হয়ে টুঙ্গিপাড়ার সমাধি থেকে উঠে এসেছেন।
এতকাল পর মূর্খ হেফাজতিরা ভাবছে মুজিবের ভাস্কর্যের ক্ষতি করে তারা মুজিবের বিনাশ ঘটাবে। মুজিব তো ভাস্কর্যে নেই। আছেন আদর্শে, রাজনৈতিক দর্শনে। সেই আদর্শ ও দর্শনের বিনাশ ঘটানো কি মূর্খ হেফাজতিদের পক্ষে সম্ভব? গোটা সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে ফেলে যেমন মার্কসবাদ, লেলিনবাদের বিনাশ ঘটানো যায়নি। তেমনি শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙে তার ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দর্শন এবং সমাজবাদী অর্থনীতির বিনাশ ঘটানো যাবে না। এত বিপর্যয়ের মধ্যেও যে নামে হলেও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ টিকে আছে, তার কারণ শেখ মুজিবের অবিনাশী ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দর্শন। একদল ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার স্বার্থে মুজিবের আদর্শ থেকে সরে যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে জাদুঘরের প্রদর্শনী করতে পারে, কিন্তু জাতি তাকে ভুলবে না। তার আদর্শের মধ্য দিয়েই জাতি তাকে পুনরাবিষ্কার করবে। কারণ তিনি আর এখন দলের নেতা নন। তিনি দল-মতের ঊর্ধ্বে জাতীয় নেতা। জাতির জনক কোনো দলের নেতা হতে পারেন না। জর্জ ওয়াশিংটন বা আব্রাহাম লিঙ্কন কোন দলের নেতা ছিলেন, তা আজ আর কেউ জিজ্ঞাসা করে না। কারণ, তারা জাতির স্থপতি এবং পিতা।
বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে যারা ক্ষমতায় গেছেন এবং তার নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতায় আছেন, তাদের বাইরে একদল জনগোষ্ঠী আছেন, যারা ব্যক্তি মুজিবের যতটা নয় তার চাইতে বেশি তার আদর্শের অনুসারী। তারা ‘ধনীর ভূস্বর্গ’ হিসাবে দেখতে চান না। দেখতে চান বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র—তথা ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজবাদভিত্তিক বাংলাদেশের পুনর্গঠন। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লড়াই এখনো শুরু হয়নি। তার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে মাত্র।
n লন্ডন, ৩ এপ্রিল, শনিবার, ২০২১