সিলেটের প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে সংকট
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২০, ৭:১২ অপরাহ্ণস্পেশাল করেসপন্ডেন্ট:
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৯ মাসে অস্তিত্ব সংকটের কবলে পড়েছে সিলেটের প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। টিউশন ফি ভিন্ন পদ্ধতিতে আদায় হলেও নানা টাল বাহনায় ছাটাই করা হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে মানবিকতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। এমনটি জানিয়েছেন মানুষগড়ার কারিগররা। কেউ কেউ মুখ খুললেও অনেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে রয়েছেন চুপ!
জানা গেছে, সিলেটের অসংখ্য প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকে নাম মাত্র বেতনে শিক্ষককতা করছেন। এতে কিছুটা বেঁচে থাকার খোঁড়াকমিলে। এমন প্রেক্ষাপটে করোনা পরিস্থিতিতে এই শিক্ষকরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরাও এখন চরম বিপাকে ।
এদিকে সিলেটে বিভাগের কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় করোনাকালে ভাড়া দিতে না পেরে বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন মালিকরা। নাম না প্রকাশের শর্তে সিলেট নগরীর একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র আবির (ছদ্ধনাম) বলেন, আমি নগরীর নামী একটি কলেজের ছাত্র । কলেজে শিক্ষক ছাটাই করা শুরু হয়েছে । এরমধ্যে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষককে ছাটাই করা হয়েছে। এটা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে ।
শিক্ষকদের বেতন ঠিকমত দেয়া হচ্ছেনা। দু’মাসে একবার দেয়া হচ্ছে, তাও অর্ধেক। শিক্ষকদের বাধ্য করা হয় কলেজে আসার জন্য। বন্ধ থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। শুধু সিলেট মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম নয়। এবার সিলেটের বাইরের পরিস্থতি আরও খারাপ। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় ঘটছে আজ গুবিকান্ড। গত কয়েকদিন ধরে সমতা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এলাকায় বেশ তোলপাড় চলছে । স্থানীয়রা জানান করোনা প্রাদুর্ভাব এর কারণে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যখন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বন্ধ রেখে অনলাইনে বিনা বেতনে সরকার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শিক্ষকদেরকে সরকার ঘরে বসে বেতন দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সমতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আত্মসাতের মতো জঘন্য অভিযোগে উঠেছে।
এমতাবস্থায়, এলাকায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আবু তাহের নিরব নামে এক তরুন জানান, ঘটনাসত্যি। সবার দাবি একটাই, প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি সমাধান করুন। ভূকশিমইল সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সরকার বলেন, জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা ও অসহায় জীবন-যাপনকরছেন। সরকারের কাছ থেকে জাতীয় করণের কোনো আদেশ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা পরিবার নিয়ে মহা বিপদে পড়েছেন। শিক্ষকদের অনেককে অনাহার-অর্ধাহারে ঘরে থাকতে হচ্ছে। করোনার সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাঁচতে অনেকেদিন মজুরির কাজও করছেন। তিনি সরকারের কাছে প্রণোদনা প্রদান ও স্কুল দ্রæত জাতীয় করণের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান।
বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী বর্তমানে করোনাকালে অত্যন্ত অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। তবে শিক্ষক নিয়ে সিলেটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের অধ্যক্ষ মু. রহমান বুলবুল বলেন, এটাঅমানবিক। মেনে নেয়া যায়না। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলার বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণসম্পাদক মনিরুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৯ মাস অস্তিত্ব সংকটে প্রাইভেটশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন হয়েছিল, কিন্তু করোনামহারীর কবলে সেই ৯মাসের ভিতর অস্তিত্ব সংকটে শিক্ষকরাও। আমরা আজ মানবেতর জীবন যাপন করছি, যেনো কেউ দেখার নেই। আমি মানবতার প্রতীক। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই।
তবে সিলেটের একাধিক প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানান, আগেস্যালারি চাইতে একটু কম দেয়া হচ্ছে। তবে অনিয়মিত পাচ্ছেন শিক্ষককরা। তারাজানান, করোনা পরিস্থিতিতে অভিভাবক রাটিউশন ফি দিতেনা পারার কারণেই লোকসানে পড়েছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবেন্দ ওমতে অত্যন্ত দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন সিলেটবিভাগের বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারের কাছে কোন সুবিধা না পাওয়া এ শিক্ষকরা আগে প্রাইভেট-টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিতেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক বিপদে পড়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ সংসার চালাতে রাস্তায় বসে বিক্রি করছেন ফলমূল। কেউবা আবারবাধ্য হয়ে দিন মজুরি করছেন। কিন্ডার গার্টেন স্কুল থেকে উচ্চ শিক্ষার স্তরে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অনেক শিক্ষকও অত্যন্ত সংকটে জীবন পার করছেন। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। না খেয়ে থাকলেও কাউকে বলতে পারছেন না। এদিকে, সরকার নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রণোদনা বিতরণ করলেও তালিকার বাইরেই রয়ে গেছেন বৃহৎ একটি অংশ। এতে করে জেলার প্রায় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল করোনাভাইরাসের সময়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। যার অধিকাংশ এখন বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে সিলেটের বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলের অভিভাবক স্কুলের বেতন অর্ধেকে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল পরিচালনার কথা বলে পুরো ফি আদায়ে অটল অবস্থানে রয়েছে। আবার ছোটখাটো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক অভিভাবক বেতন দিতে না পারায় শিক্ষক ও কর্মচারিরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন দু’মুখীসংকট সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ১৮ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করলেও তারা বেতন নিচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
. . . . . . . . .