ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে সিলেটের পর্যটন শিল্প

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৭:১২ অপরাহ্ণস্টাফ রিপোর্ট
সিলেটের স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল পর্যটন কেন্দ্রিক। দেশের এবং দেশের বাইরে দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত ছিল এই সিলেট। সেই সাথে যানবাহন, খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, কাপড়, গহনাপাতি খেলনা ইত্যাদি ব্যবসায় জৌলুশ ছিল। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে এসব ব্যবসায় ধস নামে। ফলে সিলেটের পুরো পর্যটন ব্যবসা তলানিতে নেমে আসে।
সিলেটের পর্যটন এলাকা বিছনাকান্দি, রাতারগুল, হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, শনিরহাওর, শিমুলতলা, মালনিছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা চা বাগান, সোনাতলা পুরাতন জামে মসজিদ, রায়ের গাঁও হাওর, ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা, এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, জাকারিয়া সিটি, ডিমল্যান্ড পার্ক, পান্থুমাই জলপ্রপাত, লক্ষনছড়া, লোভাছড়া পাথর কোয়ারি, হযরত শাহজালাল (র:) মাজার, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, জাফলং, শ্রীমঙ্গল, শ্রী শ্রী দুর্গাবাড়ি ও ইকোপার্ক, টিলাগড় (আলুরতল) ইকোপার্ক, লাউয়াছড়া উদ্যান, তামাবিল, লোভাছড়া চা বাগান, শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি, বাসুদেব মন্দির, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, সিলেট জাতীয় বন উদ্যান, হযরত শাহপরাণ (র:) মাজার কীনব্রিজসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ ছুটে আসতেন। দেশের বাইরে থেকে ভ্রমণকারীরাও সিলেট ঘুরতে আসতেন। ফলে সিলেটের এই পর্যটন খাত চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।
করোনা মহামারিতে ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে সিলেটের এই পর্যটন শিল্প। হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এখন খাঁ খাঁ করছে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, এই খাতে সিলেট অঞ্চলে ক্ষতি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি।
নীল স্বচ্ছ পানি, নুড়ি পাথর আর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, সাদাপাথর, রাতারগুল পর্যটন কেন্দ্র। একটু মানসিক প্রশান্তির আশায় সারা বছর পর্যটকদের ঢল নামে জায়গাগুলোতে। কিন্তু করোনার থাবায় নিষিদ্ধ, স্তব্ধ পর্যটন কেন্দ্রগুলো। নেই কোন পর্যটকের কোলাহল।
সিলেটের পর্যটন মোটেল ব্যবস্থাপক কাজি ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক আসে সিলেট বিভাগে। কিন্তু এখন এ নিয়ে আমরা হতাশ। করোনা সব তছনছ করে দিয়েছে।’
কোভিড সংক্রমণরোধে মার্চ থেকে বন্ধ পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টহাউস। বন্ধ হয়ে যায় পর্যটক পরিবহনও। এতে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ে শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস ওনার্স এসোসিয়েশনের সিলেট হোটেল-মোটেল প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, ‘গত কয়েক মাসে সব মিলিয়ে আমাদের দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।’ আনন্দ রেন্ট-এ-কার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জামান সোহেল বলেন, ‘সব মিলিয়ে পর্যটন পারপাসে প্রায় ২৫০০ গাড়ি চলাচল করতো। গাড়ি খাতে অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাজার এলাকার কয়েকশো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও। শুধু মাজার কেন্দ্রিক নয়, কাপড় দোকান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গহনাপতি ব্যবসায়ী। সিলেট অঞ্চলে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে পাঁচ হাজারের মতো। করোনা মহামারিতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে এই সব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।
সিলেটে পর্যটন খাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে এবং আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে কয়েক বছর সময় লাগবে। করোনায় মানুষের জীবনের গতি-প্রকৃতি বদলে দিয়েছে। সব সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। আবার নতুন করে সব শুরু করতে হচ্ছে ‘জিরো’ থেকে। করোনা প্রভাবে ভেঙে পড়া সিলেটের পর্যটন খাত কবে ঘুরে দাঁড়াবে, কবে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে- এমন প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি- করোনা নিয়ন্ত্রণ হলে সব কিছু আবার নতুন আঙ্গিকে শুরু করা হবে। সবকিছু আবার আগের মত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে
. . . . . . . . .