নিউইয়র্ক টাইমস: বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংক কেলেঙ্কারি
![](https://sylheterkantho.net/img/icon.jpg)
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০১৬, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণগত ৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সঞ্চিত বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) চুরি হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এখনো জানা যায়নি কারা এই টাকা চুরিতে জড়িত এবং এর গন্তব্য কোথায় ছিল। একে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক চুরির ঘটনা বলা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা চুরির ঘটনা থেকে এটাই প্রথম নয়। ফেডারেল রিজার্ভের মতই বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে, এসব ঘটনার কোনো কোনোটির সাথে খোদ অভিভাবকরাই জড়িত বলে অভিযোগ।
বাংলাদেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং সম্পদের প্রায় এক চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সরকারের সাথে সম্পর্কে কারণে অর্থনীতিতে তাদের প্রভাব অস্বাভাবিক। যেমন আইএমএফের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অত্যন্ত বেশি। সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশ, যেটা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে ৪ ভাগ।
এজন্য দায়ী মূলত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। তবে মূল অপরাধী হলো দেশের পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি।
দেশের সবচেয়ে কুখ্যাত ব্যাংক কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয় দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকে। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটি অবৈধভাবে ৪৫.৪ কোটি ডলার (প্রায় ৩৬৩২ কোটি টাকা) ঋণ দেয়, এর মধ্যে ৩৪.৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়া হয় হলমার্ক গ্রুপকে।
এমনকি এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরও সোনালী ব্যাংক উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ চক্র থেকে বের হয়নি। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ শতাংশ।
এই ব্যাংকটিসহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংককে মূলধন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। ২০১৪ সালে ৬৪ কোটি ডলার (প্রায় ৫১২০ কোটি টাকা) মূলধন সহায়তা দেয়া হয়। ২০১৫ সালে তা বেড়ে ৭০ কোটি ডলার দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ ধরনের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড এবং তাদেরকে পদ্ধতিগতভাবে বেইল-আউটের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচেষ্টার জন্য দায়ী মূলত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক এলিটদের সম্পর্ক।
এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হলো সালমান এফ রহমান। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এবং বেক্সিমকোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। উইলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০০৭ সালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাকে ‘সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণ খেলাপি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
২০০৭-০৮ সালে তিনি কারাবরণ করেন। ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তার কাছে ৮০ কোটি ডলার বা ৬৪০০ কোটি টাকা পাবে।
তাকে ঋণ পুনঃতফসিলী করার সুযোগ না দেয়ার জন্য তিনি আগের বিএনপি সরকারের সমালোচনা করেন। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা। এখন তার ঋণ পুনঃতফসিল করা হচ্ছে।
সালমান এফ রহমান কোনো ব্যতিক্রম নন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের ৫৬.৫ কোটি ডলার (প্রায় ৪৫২০ কোটি টাকা) লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে দুর্নীতি দমন কমিশন বিরক্ত করেনি। কারণ তার রাজনৈতিক যোগাযোগ। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো রাজনীতিকদের মালিকানায়।
এর প্রধান কারণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থসঙ্কট এবং দুর্বলতা। টেকনোক্র্যাট, পরিদর্শক এবং আদালত- চিরাচরিত এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের রাজনীতিকদের লাগাম টেনে ধরার সামর্থ্য নেই।
এর প্রভাব দেখা যায়, বাংলাদেশে কর আদায় হয় জিডিপির মাত্র ১০ ভাগ। ঘুষ দিলেই কর ফাঁকি দেয়া যায়।
এরপর আছে অর্থপাচার। বাংলাদেশের মত দেশে আপনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করে তা আবার হারাতে চাইবেন না। ফলে আপনি চাইবেন সেই অর্থ বিদেশে পাচার করতে।
বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির হিসেবে, শুধু ২০১৩ সালেই বাংলাদেশ থেকে ৯৭০ কোটি ডলার (প্রায় ৭৭,৬০০ কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। ২০০৪ সালের তুলনায় এটা ৩৩০ কোটি ডলার বেশি।
এই অর্থ বাংলাদেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির (৬ শতাংশের) তুলনায় বেশি এবং বাংলাদেশ বছরে যে বিদেশি সাহায্য পায় তার সাড়ে তিনগুণ।
বাংলাদেশের উচিত অবৈধ অর্থপাচার বন্ধ করা এবং আয় ও উপার্জন থেকে বেশি করাদায়ের চিন্তা করা। এজন্য দরকার বড় ধরনের সংস্কার। সেটা হতে হবে কর প্রশাসনের, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি ব্যবস্থার।
যেসব এলিট বর্তমান ব্যবস্থার সুবিধাভোগী তাতে তারা সামান্যই আগ্রহ দেখাবেন। তবে বাংলাদেশের অসৎ রাজনীতিকদের লাগাম টানার জন্য উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্র দরকার।
সোমবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত জোসেফ আলচিনের নিবন্ধ (ঈষৎ সংক্ষেপিত)
ভাষান্তর: ফাতিমা ফেরদৌসী আশা
. . . . . . . . .