শঙ্কার মধ্যেই কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন কেরানীগঞ্জে!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০১৬, ৯:৩১ পূর্বাহ্ণনানা সীমাবদ্ধতা, জনবল সংকট ও নিরাপত্তা শঙ্কার মধ্য দিয়েই রোববার (১০ এপিল) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। কারাগার উদ্বোধনের আগেই বন্দিদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পর্যাপ্ত জনবল চাওয়া হলেও এখনো তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে, দুই কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা বিরাজ করছে কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে অবস্থিত দেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগারে ১০ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছেন। অথচ এর ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৩ হাজারের মতো। উদ্বোধনের পর যে কোনো ছুটির দিন নতুন কারাগারে এসব বন্দিদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন, আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। এছাড়া নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারের বিভিন্ন দিক নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়, বাংলামেইলের।
এদিন, সংবাদ সম্মেলনে আইজির (প্রিজন) কাছে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্ন ছিল- ১৭ একর আয়তন বিশিষ্ট বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন প্রায় সাড়ে ৭০০ কারারক্ষী। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বন্দিদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে আড়াইশ কারারক্ষীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বাকি ৫০০ জনবল দিয়েই কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
বিভিন্ন সময় কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ জনবল কারা কর্তৃপক্ষের জন্য অপ্রতুল। কিন্তু নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার বর্তমান কারাগারের চেয়ে দ্বিগুণ আয়তনের। নতুন কারাগার উদ্বোধনের পর বর্তমান কারাগার থেকে বন্দি স্থানান্তর করা হলে দুই কারাগারের এই সাড়ে ৭০০ কারারক্ষী ভাগ হয়ে যাবেন।
তখন এ স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে কীভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে, জানতে চাইলে জবাবে আইজি (প্রিজন) বলেন- আপনাদের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। বন্দি স্থানান্তরের দিন নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাছে এমনিতেই যথেষ্ট কারারক্ষী নেই। আমরা ১৯৮৭ সালের জনবলের কাঠামো দিয়েই এখনো চলছি। এখন ১০ হাজারের বেশি কারাবন্দির জন্য মাত্র দুইজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন। আবার নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর হলে সেখানে ৫০০ কারারক্ষী দায়িত্বে থাকবেন। এখানকার (পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার) কারাগারে থাকবেন ২৫০ জন। সে দিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বন্দি স্থানান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, তবে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। নতুন করে জনবল চাওয়া হয়েছে, জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। অনুমোদন হলেই সমস্যা সমাধান হবে। বন্দি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন স্থানে গেলে প্রথম প্রথম কিছু সমস্যা তো হবেই।
এগুলো মাথায় নিয়েই কাজ করতে হবে। পরে আস্তে আস্তে তা ঠিক হয়ে যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কেরানীগঞ্জের এ কারাগারটিতে শুধু পুরুষ বন্দিদের রাখা হবে। নারী বন্দিরা থাকবেন বর্তমান কারাগারেই। নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারের ১০ হাজারের বেশি বন্দির মধ্যে রয়েছেন, প্রায় ৩০০ নারী।
উদ্বোধনের পর বন্দি স্থানান্তরের আগেই প্রাথমিকভাবে নারী বন্দিদের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর বাকি সব বন্দিদের রাখা হবে, নতুন কারাগারে। ফলে, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে কিছুটা সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারটির পাশে আরো একটি মহিলা কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি নির্মাণের পর সেখানে নারী বন্দিদের স্থানান্তর করা হবে। ফলে, নারীদের নিয়ে আর ঝামেলায় পড়তে হবে না কর্তৃপক্ষকে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ১০ হাজারের বেশি বন্দিকে এক দিনেই স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করছে জেল কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। স্থানান্তরের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সব বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে বিষয়ে অগ্রসর হবে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে আইজি (প্রিজন) বাংলামেইলকে বলেন, আমরা এপ্রিল মাসের মধ্যে যে কোনো ছুটির দিনেই সব বন্দিদের স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করছি। তবে এতে সমস্যাও আছে। কারণ, একদিনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি বন্দি স্থানান্তর করতে হলে প্রতিভ্যানে ৫০ জন করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ প্রিজনভ্যান দরকার।
তিনি বলেন, সারাদেশের ৬৮ কারাগারের সব প্রিজনভ্যান আনা হলেও সেই সংখ্যা হবে না। তারপরও আমরা একদিনেই বন্দিদের স্থানান্তর করবো। এরপরেও বলছি,পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, ১৭ একর আয়তন বিশিষ্ট পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারটিতে সাড়ে ৭০০ কারারক্ষী থাকার পরেও বিভিন্ন সময় কারাগারে মাদক প্রবেশ, মোবাইল জ্যামার থাকার পরেও বন্দিরা ফোনে কথা বলাসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
এসব বিষয়ে ইফতেখার বলেন, নতুন কারাগারে মোবাইল ফোন জ্যামার বসানো হয়েছে। কিন্তু, আমরা জানি, বর্তমানে কেরানীগঞ্জে বেশি বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এটা চলতে থাকলে জ্যামার কাজ করবে না। লোডশেডিংয়ের সমস্যা না হলে কোনো বন্দি মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন না।
বর্তমানে ঢাকার মূল কারাগারটি ১৭ একর আয়তনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর বদলে নতুন কারাগারটি ৩১ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন কারাগারে যাওয়ার পর নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজি (প্রিজন) বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় অবশ্যই কারারক্ষী কম। তবে নিরাপত্তা রক্ষায় কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। নতুন লোকবল চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ওই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
এদিকে, কারাগার স্থানান্তর হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর কারারক্ষীদের আবাসনসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমান কারাগারে ডিউটি থাকায় অনেকেই এর আশেপাশেই বাসা নিয়েছেন। সে মোতাবেক, ছেলে-মেয়েদেরকেও ভর্তি করিয়েছেন, আশপাশের স্কুল-কলেজেই। কিন্তু কারাগার স্থানান্তর হওয়ার পর এখান থেকে গিয়ে অফিস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে তাদের জন্য।
এ বিষয়ে ইফতেখার উদ্দীন বাংলামেইলকে বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা সমস্যা হলেও বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের সাড়ে ৭০০ কারারক্ষীর মধ্যে সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দিদের পাহারায় প্রায় আড়াইশ কারারক্ষী নিয়োজিত থাকে। বাকি ৫০০ কারারক্ষীর থাকার ব্যবস্থা সেখানেই করা হবে। তবে প্রথম অবস্থায় কিছুটা কষ্ট করতে হবে তাদের।
বাংলামেইল
. . . . . . . . .