প্রচলিত আইনেই তনু হত্যার বিচার সম্ভব
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০১৬, ৬:১৬ অপরাহ্ণপ্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে মন্ত্রিসভায় তুমুল আলোচনা
প্রচলিত আইনে তনু হত্যার তদন্ত সম্ভব নয় ও আইনপ্রণেতাদের অজ্ঞতা থাকলে লেখাপড়া করে হলেও একটু বোঝার চেষ্টা করতে হবে, প্রধান বিচারপতির এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুমুল আলোচনা হয়েছে।
সোমবার মন্ত্রিসভায় একাধিক মন্ত্রী প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যে কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, প্রধান বিচারপতি সংসদ নিয়ে ঢালাও বক্তব্য রেখেছেন। তা তিনি করতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, কিভাবে আইন প্রণয়ন হয় উনি (প্রধান বিচারপতি) জানেন কি না জানিনা। কোনো আইন তৈরির উদ্যোগ মন্ত্রণালয় নেয়ার পর তা মন্ত্রিসভা, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং, সচিব কমিটির পর্যবেক্ষণ, মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়াও সংসদে এ নিয়ে বিতর্ক, যাচাই বাছাই, সংশোধনী, দফাওয়ারী সংশোধনী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিবেচনা সহ কয়েক ধাপে পর্যালোচনা হয়ে থাকে। প্রধান বিচারপতি যে উচ্চ মানের আইনী বিতর্কের কথা বলছেন তা হতে অন্তত কুড়ি বছর সময় লাগবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ হিসেবে নির্বাহী, বিচার বিভাগ ও সংসদ কার কি দায়িত্ব তা সংবিধানে বলা আছে। একটির ওপর আরেকটির প্রাধান্য বিস্তার না করে যার যার দায়িত্ব পালন করলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলবে।
গত দোসরা এপ্রিল প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রচলিত আইন দিয়ে তনু হত্যার তদন্ত সম্ভব নয়, এই জন্য প্রয়োজন আইন পরিবর্তনের। প্রধানবিচারপতি আরও বলেন, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের বিষয়ে ভালো আলোচনা হয় না, তাই ভালো আইন না পাওয়ার আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আইনগুলো যেসব প্রণয়ন করা হয়, যে উদ্দেশ্যে হয় সেটা পূরণ হয়না। আমরা যখন পার্লামেন্টারি ডিবেট নিয়ে আসি আইনের উদ্দেশ্য অনুধাবন করার জন্য, আমরা কিছুই পাই না। আইনপ্রণেতাদের অজ্ঞতা থাকলে লেখাপড়া করে হলেও একটু বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আজকে আমাদের আইন বিষয়ে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা।
মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধান বিচারপতি সংসদ সদস্যদের অজ্ঞ বলে যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয়। সংসদে আইন পাশ হবার আগে তা কয়েক ধাপে পরীক্ষা হয়, ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করে সংশোধনী আনা হয়, বিতর্ক চলে এবং মন্ত্রণালয়, সচিব কমিটি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সহ বেশ কয়েক দফা কোনো আইন যাচাই বাছাই করে দেখা হয়। তাই সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির ঢালাওভাবে বক্তব্য দেয়া ঠিক নয়।
মন্ত্রিসভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ ও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছে সংসদ সদস্য। তারা অজ্ঞ বলে প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপস্থিত’তিতে তিনি একটি অনুষ্ঠানে এধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতও সরকারের নির্বাচন ব্যবসা নিয়ে একই অনুষ্ঠানে সমালোচনা করেছেন। আইনসভা বা সংসদ নিয়ে প্রধান বিচারপতি এভাবে মন্তব্য করতে পারেন না।
দিন কয়েক আগে আইনের সংস্কার ও আইন কমিশনে রচিত গ্রন্থর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি কুমিল্লায় মেধাবী ছাত্রী তনু হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, কুমিল্লায় এটা অপরাধ হয়েছে। এটা আপনি ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোর্ট দিয়ে তদন্ত করতে পারবেন না। এটা নতুন ডিজিটালাইজ ওয়েতে নতুন পš’ায় এটার ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। আমরা যতই মিটিং-মিছিল করি, আমাদের, আমাদের পুলিশ অফিসারদের যে মানসিকতা সেসব দিয়ে এটা ডিটেক্ট করা যাবে না। সাংবাদিক দম্পতি যেমন ডিটেক্ট করা যায়নি তেমনই যাবে না।
মন্ত্রিসভায় তনু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার প্রচলিত আইনেই করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন অনেক ‘আপডেট’ করা হয়েছে। ভারতেও এধরনের আইন করা হয়েছে অনেক পরে। এছাড়া দেশে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।
. . . . . . . . .