বিএনপির ইউরোপ মিশন ব্যর্থ যে কারণে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণশফিউল আলম দোলন :: দেশের মতোই বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হলো তাদের ইউরোপ মিশনের শুরুতেই। সরকারকে চাপে ফেলতে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেওয়া বিএনপির প্রথম বিক্ষোভ কর্মসূচি হোঁচট খেল বেলজিয়ামে। দেশটির রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্টের সামনে গত ৫ জানুয়ারি একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।
কর্মসূচির মূল উদ্যোক্তা ছিল যুক্তরাজ্য বিএনপি। যুক্তরাজ্য থেকে ৫১ সিটের তিনটি মাইক্রোবাস ও বেশ কিছু প্রাইভেট কার ভরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যান ব্রাসেলসে। একই সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইতালিসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকেও শীতের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করেই ইইউ পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়েছিলেন শতাধিক নেতা-কর্মী।
শুধু সংশ্লিষ্ট দেশ বেলজিয়াম বিএনপির কমিটিকে জানানো না হলেও পরে তাত্ক্ষণিকভাবে সেখান থেকেও কয়েকজন যোগ দেন। কিন্তু বিধিবাম! সেদিন ইইউ পার্লামেন্ট ছিল বন্ধ। ফলে বাধ্য হয়েই যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা বিক্ষোভের বদলে ইইউ পার্লামেন্টের পাশের একটি হোটেলে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সম্মেলনে ইইউ পার্লামেন্টের কয়েকজন এমপিকে উপস্থিত রাখার কথা বলা হলেও কোনো এমপি সেদিন সেখানে ছিলেন না। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ইইউ এমপির বদলে তার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টকে ধরে এনে বসানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
তা ছাড়া ইউরোপের কয়েকটি দেশের কয়েকশ’ নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন। তিনি হলেন— এনটিভির বেলজিয়াম প্রতিনিধি রুমী বেগম। ইউরোপে বিএনপির এ বেহাল অবস্থার জন্য সেসব দেশের বিএনপি নেতা-কর্মীরা যুক্তরাজ্য বিএনপিতে হঠাত্ ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ সুবিধাবাদী কয়েকজন ব্যক্তিকে দায়ী করেছেন।
তারা বলেন, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে কতিপয় সুবিধাবাদী ব্যক্তি ইইরোপের বিভিন্ন দেশে বিএনপির কমিটি গঠনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ‘ওয়ান-ইলেভেন’সহ দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পুরনো (লন্ডনস্থ) বিএনপি নেতাদের দূরে সরিয়ে রেখে চাঁদাবাজিসহ নানা রকমের সুযোগ-সুবিধা লুটে চলেছেন।
উল্লিখিত এসব দেশের নেতারা এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মায়িদুর রহমান বলেন, কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তবে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ পূরণের ক্ষেত্রে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত, যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বিষয়টি অগ্রাধিকার হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। অন্যথায় সে সংগঠনের পক্ষে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পাদন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুখে কিছু না বলতে পারলেও বিএনপির প্রবীণ নেতা মায়িদুর রহমান নিজেও এই ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ সুবিধাবাদী নেতাদের নিয়ে ভিতরে ভিতরে খুবই অস্বস্তিতে রয়েছেন। জানা যায়, সিন্ডিকেট সদস্যদের অনুগত না হলে তারেক রহমানের সঙ্গেও দেখা করতে দিচ্ছেন না তারা।
কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মায়িদুর রহমানকে ছাতার মতো সামনে রেখে ব্যবহার করছেন এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ার হোসেন খোকন, যুক্তরাজ্য বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সায়েম (কিছুদিন আগেও যিনি লন্ডনে গণফোরামের অঙ্গসংগঠন ছাত্রফোরামের সমন্বয়ক ছিলেন), তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরসহ বেশ কয়েকজন নেতা বৈদেশিক বিএনপির এই সুবিধাবাদী সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিএনপি নেতারা। হুমায়ূন কবিরের রাজনৈতিক কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডও নেই। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের অবৈধ সুযোগ না দেওয়ায় জার্মানি বিএনপির সভাপতি মাসুদ রেজা, ইতালি বিএনপির সভাপতি নকিয়ত উল্লাহ, বেলজিয়াম বিএনপির সভাপতি সায়দুর রহমান লিটন, ফ্রান্স বিএনপির সভাপতি এহসানুল হক বুলুসহ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও তারেক রহমানের অঘোষিত প্রেস সচিব সালেহ শিবলীসহ অনেক নেতা ও ত্যাগী ব্যক্তিকে যুক্তরাজ্যে কোণঠাসা করে রেখেছে বৈদেশিক বিএনপির এই নব্য সিন্ডিকেট। –বাংলাদেশ প্রতিদিন
. . . . . . . . .