বিএনপির একলা চলো নীতি, ক্ষোভে ফুঁসছে শরিকেরা
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০১৬, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে সমাবেশ
বিএনপি জোটগতভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ওই নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে রাজধানীতে এককভাবে সমাবেশ করেছে দলটি। এতে তারা চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এজন্য তারা দায়ী করছে বিএনপির ‘একলা চলো নীতি’-কে। বিএনপি বলছে, প্রত্যেক দলের রাজনীতি যেহেতু আলাদা, তাই তারা পৃথক কর্মসূচি করবেই। কেউ কেউ বলছে, নামসর্বস্ব এসব দলকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। জামায়াতকে অনেকেই ভাবছেন ‘গলার কাঁটা’।
নাম প্রকাশ না করে জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, বিএনপির কাছে হয়ত তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অথচ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যেতে তাদের মন্ত্রী-এমপিসহ নানা প্রলোভন দেখানো হয়েছিল।
‘আমরা জোটনেত্রীর সঙ্গে বেইমানি করিনি। সেজন্য জোটের ঐক্য অটুট আছে। সময়ের পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ। অথচ জোটে আমাদের মূল্যায়ন নেই’, বলেন এক শরিক নেতা।
শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘শুনেছি জামায়াতকে না আনার শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়। সেক্ষেত্রেও জোটের অন্য শীর্ষ নেতাদের সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো যেত, কিন্তু বিএনপি সেটা করেনি। এ ছাড়া সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনেও জোটকে কোনো ছাড় দেয়নি বিএনপি।’
তবে বিএনপি বলছে ভিন্ন কথা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘জোটের প্রত্যেকটি দলের রাজনীতি আলাদা। তাদের আদর্শ ও দর্শন ভিন্ন। দলগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্যও আছে। সবাই একই রাজনীতি, কর্মসূচি ও আদর্শে বিশ্বাসী হলে ২০টি দল গঠিত হতো না। সুতরাং যার যার দলীয় কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করবে। এ কারণে জোটে ফাটল ধরবে কিংবা জোট থাকবে না, এমন কিছু ভাবার অবকাশ নেই।’
‘গত বছর এককভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, এ বছরও এককভাবে করতে চেয়েছি। গতবার অনুমতি দেয়া না হলেও এবার শেষ মুহূর্তে দেয়া হয়। গতবার জামায়াতকে নিয়ে সমাবেশ করতে চেয়েছি বিধায় অনুমতি দেয়নি, এবার এককভাবে চেয়েছি বলে অনুমতি দিয়েছে- এ কথা সঠিক নয়’, বলেন গয়েশ্বর।
বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা উড়িয়েই দিলেন জোটবদ্ধ ছোট দলগুলোকে। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তারা বলেন, ৫ জানুয়ারিতে সরকার যেখানে সমাবেশ করতে দিতে রাজি হচ্ছিল না, সেখানে জোটের দলগুলো আছে তাদের মূল্যায়ন নিয়ে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দল দুটির নেতৃত্বে সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে ২০ দল ও ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এদের অধিকাংশের তেমন কোনো অবস্থান নেই। তাই এদের এত গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই।
জামায়াত প্রসঙ্গে তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এই দলটি এখন বিএনপির জন্য গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। না পারছি গিলতে, না পারছি উগরাতে। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেশ করতে চাইলে অনুমতি দেয়া হতো না। তাহলে কেন আমরা অহেতুক বিপদ ডেকে আনব?
কৌশলগত কারণে জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটে রেখেছে বিএনপি। দলটির আশঙ্কা, তারা জামায়াতকে ছেড়ে দিলে আওয়ামী লীগ তাদেরকে নিয়ে নেবে। তাই জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জামায়াত ছাড়তে বিএনপির ওপর ভারতের অব্যাহত চাপ থাকা সত্ত্বেও ভোটের সমীকরণ বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এই দলটিকে ছাড়ছে না বিএনপি।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বাংলামেইলকে বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার কারণে বিএনপি সমাবেশ করতে পেরেছে। তবে জোটগতভাবে সমাবেশ করতে চাইলে বিএনপি সমাবেশের অনুমতিই পেত না, কিন্তু সমাবেশ হওয়া দরকার ছিল। এখন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, বিএনপির এ সমাবেশ করা ঠিক ছিল কি না? আমি মনে করি, সমাবেশ করাটা ঠিক হয়েছে। সেখানে আমরা থাকতে পারলে ভাল হতো।’
জোটগতভাবে বিএনপিকে কেন সমাবেশের অনুমতি দেয়া হতো না, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও জাগপা সভাপতির দাবি, ‘জোটের নেতা-কর্মী ও দেশবাসী নিশ্চয়ই অনুধাবন করছেন কারণটা কী।’
তিনি বলেন, ‘সমাবেশ বিএনপির হলেও সেখানে জোটনেত্রী (খালেদা) ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে জোটের বক্তব্যই তুলে ধরেছেন। ওইখানে আমাদের তৃপ্তির একটি ব্যাপার আছে। সুতরাং এ জোটে ক্ষোভ থাকা না থাকার কোনো ব্যাপার নেই।’
জোটে এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘আমার দলের মনোভাবের কথা বলতে পারি। সেটি হলো, যে অনুভূতি নিয়ে জোট করেছি, তা অপরিবর্তিত আছে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহতে আন্দোলনে নামে বিএনপি জোট। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয় তারা। নির্বাচনের পর ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে জোট। এর পর নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে গত বছর সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিতে নামে বিএনপি জোট। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্য দিয়ে ৯২ দিন অবরোধ চলার পর তা শিথিল হয়ে যায়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ পর্যন্ত সে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়নি।
নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূতি উপলক্ষে এ বছরের ৫ জানুয়ারিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। আওয়ামী লীগও একইস্থানে সমাবেশ ডাকায় বিকল্প হিসেবে নয়াপল্টন চায় বিএনপি। এর পর শর্ত সাপেক্ষে তাদের নয়াপল্টনে অনুমতি দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সৃষ্ট আতঙ্কের পরিস্থিতি থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।
টানা এক বছর পর উন্মুক্ত সমাবেশে যোগদান করতে পেরে তাদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। তবে আমন্ত্রিত হতে না পেরে জোট নেতারা ক্ষুব্ধ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত এ দলটি নিজ উদ্যোগেই সমাবেশ সফলের ক্ষমতা রাখে এবং ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে তা সফলও করেছে।’
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিএনপির এককভাবে সমাবেশ করার অধিকার অবশ্যই আছে। যেহেতু ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ২০ দলীয় জোট একসাথে বর্জন করেছিল, তাই কর্মসূচি জোটগতভাবে পালন না করলেও জোটের প্রধান দল হিসেবে বিএনপির উচিত ছিল শরিক দলগুলোকে এদিন আলাদাভাবে কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে পরামর্শ ও উৎসাহ দেয়া।’
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি তারপরও বিএনপির আভ্যন্তরীণ। জোট যদি কারও জন্য বোঝা হয় তাহলে তারাই তাদের করণীয় নির্ধারণ করবে।
বাংলামেইল
. . . . . . . . .