গুলির গুজবে গণ্ডগোল
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৫০ অপরাহ্ণরাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত সিটি করপোরেশনের ট্রাক স্ট্যান্ডে অবৈধ স্থাপনা ও সড়ক থেকে ট্রাক সরাতে মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। গত ৮ নভেম্বর ওই সময় শেষ হয়েছে। তবে সরেছিল না একটি ট্রাকও। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির নেতাদের অনুরোধে মেয়র তাদের তখন আরো ২০ দিন সময় বেঁধে দেন। সে মোতাবেক আজ রোববার ছিল সড়ক দখল মুক্ত করা ও অবৈধ স্থাপনা সরানোর শেষ দিন। কিন্তু এরপরেও কেউ ট্রাক বা অবৈধ স্থাপনা সরাননি।
পূর্বঘোষণা মোতাবেক রোববার সকালে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, শ্রমিক, বুলডোজার নিয়ে ট্রাক স্ট্যান্ডে হাজির হন করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। দুপুরের দিকে যুক্ত হন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকও। কারণ, দখলদারদের কবলে তার রেলের জমিও রয়েছে। মেয়র আনিসুল হক নিজেই করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেন। এরপরেও ট্রাক মালিক পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।
দুপুরে মন্ত্রী আসার পরপরই বাইরে থেকে একটি ঢিল ছোড়া হয় শ্রমিকের ভিড়ে। এতে একজন শ্রমিক আহত হন। মুহূর্তেই আহত শ্রমিককে গুলি করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পুরো ট্রাক স্ট্যান প্রাঙ্গণ। উচ্ছেদে নেতৃত্বদানকারী সবার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া শুরু করেন ট্রাক মালিক ও চালকরা। টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকেও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়তে হয়।
এরপর মেয়র অবস্থান নেন ট্রাক মালিক ও ড্রাইভার সমিতির কার্যালয়ে। সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন শ্রমিকরা। এরপর চলে বেশ কয়েকবার দফারফার চেষ্টা। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পর মালিক সমিতির নেতারা মাইকে ঘোষণা দেন তারা বিজয়ী হয়েছেন! মেয়র তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এক জন মাইকে ঘোষণা দেন- ‘মেয়র আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। মেয়র আমাদের ভাঙা ট্রাকের ক্ষতি পূরণ দিবেন। এখন ট্রাক থাকবে, আমরাও থাকবো।’
এরপর সেখান থেকে বের হয়ে আসেন মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘এটা ছোট্ট একটা সমস্যা। এখানে রাস্তায় ট্রাক পার্কিং না করে ভেতরে টার্মিনাল বানাবো আমরা। রাস্তার উপরের ট্রাকগুলো ভেতরে ঢুকবে। আপনারা জানেন চারজন মন্ত্রী এসে এখানে কথা বলেছেন, এটা রেলওয়ের জায়গা, এটা ক্লিয়ার করে দেন। এখানে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পুরাতন গাড়ি রাখা হয়, রিপেয়ার করা হয়, এটা ভালোভাবে ইউজ করা যাচ্ছিল না। আমরা দুই মাস ধরে এটা নিয়ে কথা বলছি। আজ মালিকপক্ষ বলেছেন এটা আমাদের ক্লিয়ার করে দেন। আমরা ভালো টার্মিনাল বানাবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের এখানে যারা অবৈধভাবে দখল করে আছেন তারা এটা ক্লিয়ার করে দেন। আপনাদের জন্য একটি ভালো ট্রাক টার্মিনাল বানাবো। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
একজনের আহত হওয়ার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘একটা ছেলেকে ইট মারা হয়েছে। আপনারা অনেকেই তার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি আপনাদের নগরপিতা, এ দায়িত্ব আমার। আমরা আপনাদের সাহায্য করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। আপনারাই আমাকে ভোট দিয়ে নগরপিতা বানিয়েছেন। ভয় করলে চলবে না।’
এরপর মেয়র তার সঙ্গীদের নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার সাতরাস্তা থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কটি অবৈধ ট্রাক চালকদের দখলে। সড়কটি কার্যত ট্রাক স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সড়কটির পাশেই রেলওয়ের জমিতে রয়েছে একটি বিশাল ট্রাক স্ট্যান্ড। সেখানে মেয়র আনিসুল হক বিশাল ট্রাক স্টান্ড নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে আনন্দিত ট্রাক মালিক ও চালকরা। কিন্তু স্ট্যান্ডটির পাশের সড়কগুলো দখল করে রাখায় পুরো এলাকায় যানজট লেগে থাকে। কিন্তু ট্রাক মালিকরা ক্ষমতাধর ও সংঘবদ্ধ বলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
বাংলামেইল
. . . . . . . . .