গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণায় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ণযারা ব্যাংকিং খাতের গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে, বেইমানি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। একই সঙ্গে প্রতিবছর এ ধরনের কতজন প্রতারককে কী ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হলো সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৫ প্রকাশকালে এসব কথা বলেন গভর্নর।
আতিউর রহমান বলেন, যারা আমাদের গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে, বেইমানি করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী বছর থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় অপরাধীদের কতজনকে চাকরিচ্যুত করেছেন, কতজনকে বিচারের মুখোমুখি করেছেন, তাদের কী ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে তা তুলে ধরতে হবে।
গভর্নর বলেন, গ্রামের ইকোনমি এখন অনেক বেশি সক্রিয়। গ্রামে এখন ৮০ শতাংশ টাকা যায় শহর থেকে। আর ব্যাংকগুলোও এখন অনেক বেশি জনমুখী হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে প্রতি তিন মাস পরপর একটি করে ব্যাংকার্স-গ্রাহক মিটিং করা যায় কি না সে বিষয়েও কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সার্ভিসের বিপরীতে গোপন চার্জ কাটার ব্যাপক সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, হিডেন চার্জ নেয়া একটা ক্রাইম। যারা এটা করে তারা ক্রাইম করছে। এজন্য তাদের পেনাল্টি করা উচিৎ। এটা দূর করতে প্রতিটি শাখায়, সবার সম্মুখে সেবার বিপরীতে চার্জের একটি তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। এই তালিকার বাইরে কেউ কোনো চার্জ কাটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
তার বক্তব্যের বিপরীতে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে নীতিমালা করে দিয়েছে, আপনারা এটা পরিপালন করুন। এটার বাস্তাবায়ন করার দায়িত্ব আপনাদের।
এদিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ শতভাগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহকরা আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে মোট ৩ হাজার ৯৩০টি অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগগুলো শতভাগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
এরআগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের গ্রাহকরা ৪ হাজার ৪৭৬টি অভিযোগ করেছিল। এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪ হাজার ২৯১টি। অর্থাৎ নিষ্পত্তির হার ছিল ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার অভিযোগ কমেছে। এর পাশাপাশি নিষ্পত্তি হয়েছে শতভাগ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে; যা মোট অভিযোগের ৫৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৯২০টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে সবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টর মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাত হোসেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিযোগ নিষ্পত্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গঠন করে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র। পরে এর পরিধি বাড়তে থাকায় আরো বৃহৎ পরিসরে একে ঢেলে সাজিয়ে ২০১২ সালের ২৫ জুলাই গঠন করা হয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ (এফআইসিএসডি)। ফ্যাক্স (০০৮৮-০২-৯৫৩০২৭৩),ই-মেইল(bb.cipc@bb.org.bd), এসএমএস এবং ১৬২৩৬ নম্বরে ডায়াল করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো0 অনিয়ম ও হয়রানির বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ করতে পারেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এ সেবা চালু করা হয়েছে। . . . . . . . . .