যেভাবে নিষিদ্ধ হবে জামায়াত
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৫, ১০:১৫ পূর্বাহ্ণআইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চায় সরকার। এ জন্য আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলটিকে বিচারের আওতায় এনে নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে দলটির নিষিদ্ধের বিষয়টিও সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে দুই ধরনের আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে সরকার। আগামী বছরের শুরুতেই এই আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে।
এই আইনি প্রক্রিয়ার একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা। অপরটি হচ্ছে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টির আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা।
হাইকোর্টের রায়ে দুই বছর আগে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। বর্তমানে তা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, শুধু ৭১’এ নয় সাম্প্রতিক সময়েও জামায়াত যে সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত তাতে সরকার নির্বাহী আদেশেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু সরকার সেটা করতে চায় না। কারণ ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত যে অপরাধ করেছে তার বিচারই এই দলটি নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই অপরাধে জামায়াতের নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। বিচারে ৭১ এর কর্মকাণ্ডে জামায়াতকেও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ট্রাইব্যুনাল। ৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংগঠনের বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু শাস্তি কি হবে সে ব্যাপারে বলা নেই। আর এ কারণেই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পক্ষের তরফে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি রয়েছে। এই দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের শুরুতে সরকার জামায়াতের বিচারের ব্যাপারে আইনের সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এ সংক্রান্ত একটি বিল আইন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংসদে উপস্থাপন করা হবে। দ্রুতই বিলটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, দ্রুতই মন্ত্রিসভায় বিলটি উঠবে।কবে উঠবে নির্দিষ্ট করে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এর বেশি আমি এখন আর কিছু বলবো না।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ইতোমধ্যেই জামায়াতের অপরাধ তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ষড়যন্ত্রসহ সাতটি অভিযোগ উঠেছে বলে জানা গেছে। এই সব অভিযোগে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া ইতোমধ্যেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। জামায়াতের নিবন্ধনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এই রিটের উপর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করায় নির্বাচনে অযোগ্য হয়েছে দলটি। অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হওয়ায় বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হলে এটি শুধু নির্বাচনেই অযোগ্য হয় না, এর রাজনৈতিক তৎপরতাও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে বলে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।-বাংলানিউজ
. . . . . . . . .