হুমকিদাতা এই হক, সেই আবদুল হক!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০১৫, ৯:২৬ অপরাহ্ণকখনও সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, কখনও আইএস, কখনও আল কায়েদা উপমহাদেশ শাখা আর ফেসবুকে পুরো সাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক, কবি, ব্যাকরণবিদ- এমন বহুবিধ পরিচয় বিচরণ করা আবদুল হক অবশেষে পুলিসের হাতে ধরা খেয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রফেসর অ্যামিরেটাস আনিসুজ্জামান, জাফর ইকবাল, ইতিহাসবিদ প্রফেসর মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক, রাজনীতিবিদদের হত্যার হুমকি দেওয়া। এসব হুমকিতে তিনি একেক সময়ে একেক পরিচয় ব্যবহার করতেন।
গত মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, দেশের বিশিষ্টজন ও রাজনীতিবিদদের হত্যার হুমকির ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ হুমকি রহস্যের আদ্যোপান্তের সন্ধান পায়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্পুফিং’ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিক ও কলামিস্ট মিজানুর রহমান খানকে হত্যার হুমকি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের অব্যাহত অভিযানে তাকে আটক করা সম্ভব হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল জানান, ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটাতেই আবদুল হক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে দেশের বিশিষ্টজনের মোবাইলে হত্যার হুমকি পাঠাতেন। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকায় তিনি ফায়যুর রহমান, মাওলানা সাদ উদ্দিন ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালেহ আহমদ ফুয়াদসহ বিভিন্ন জনের নম্বর থেকে হুমকিবার্তা দিয়েছিলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে হত্যার হুমকি যে মোবাইল নাম্বার থেকে দেওয়া হয়েছিল সে নাম্বার দেখে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রযুক্তির ব্যবহার করে বের করে সে নাম্বারটি সালেহ ফুয়াদ নামের কারও। ঐ রাতেই এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে সিলেটটুডে।
এরপর আনিসুজ্জামানকে হত্যার হুমকির ঘটনা প্রসঙ্গে ১৬ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছিলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে যে নম্বর থেকে হুমকি দেয়া হয়েছিল, ওই নম্বর ব্যবহারকারীকে আটকের পর পুলিশ নিশ্চিত হয় মোবাইল ক্লোনিং করে হুমকিবার্তা গেছে অন্য আরেকজনের কাছ থেকে। সে আরেকজনই হলেন আবদুল হক।
এদিকে গত ১১ নভেম্বর সালেহ ফুয়াদ পত্রিকায় তার সে নাম্বার দেখে সিলেটের হাফিজ ফায়যুর রাহমান নামের একজনকে ফোন দেন। যিনি দু-দুবার আটক হয়েছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এসএমএসে হুমকির অভিযোগে। প্রথমবার আটক হন ২০১৩ সালের ১৪ জুন অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ ছয় সংসদ সদস্যকে হুমকির অভিযোগে। প্রায় ৪ মাস কারাভোগ শেষে বেরিয়ে আসার পর ২০১৪ সালের ৩০শে জুন আবারও র্যাবের হাতে আটক হন তিনি।
এদিকে, নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ ট্র্যাক করছিল সালেহ ফুয়াদকে। সালেহ ফুয়াদের সঙ্গে কথোপকথনের সূত্রে ট্র্যাকিংয়ের আওতায় পড়েন ফায়যুর রহমানও। সিলেটে ডিবি কার্যালয়ে পৌঁছেন ফায়যুর রাহমান। ফায়যুর রাহমান ও সালেহ ফুয়াদ দুজনেই পুলিশের নজরে থাকেন। হেডকোয়ার্টার থেকে নির্দেশ পেয়ে ১৪ নভেম্বর তাদের নিয়ে ঢাকায় রওনা হন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
এরপর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন দুজন। তারা তাদের সন্দেহের কথা বলেন, উঠে আসে আবদুল হকের নাম। যিনি ফায়যুর ও ফুয়াদের সঙ্গে ‘মুক্তস্বর’ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাহিত্য আসরে আসতেন। সালেহ ফুয়াদের সহকর্মী হিসেবে জকিগঞ্জের একটি মাদরাসায় কম্পিউটার শিক্ষকতাও করেছেন।
আবদুল হকের নাম আলোচনায় এসেছিল ফায়যুর রহমান প্রথম যখন আটক হয়েছিলেন তখন থেকেই। ফায়যুর রহমানের পরিবারের অভিযোগ, এসএমএস জালিয়াতি করে আবদুল হকই ফাঁসিয়েছিলেন ফায়যুর রহমানকে। ফায়যুর এককালে তার প্রতিবেশী আবদুল হকের বন্ধু ছিলেন। তবে পারিবারিক বিরোধের কারণে দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
পরিবারের অভিযোগ, সেই শোধ তুলতেই তিনি ফায়যুরকে বারবার ফাঁসিয়েছেন এসএমএস সন্ত্রাসের মাধ্যমে।
পরে আরও কয়েকটি এমন অভিযোগ উঠে আবদুল হকের বিরুদ্ধে। তারই কারসাজিতে হত্যার হুমকিবার্তা পান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইনূর আক্তার পান্না ও ছাতক থানার ওসি শাহজালাল মুন্সি। শেখ সেলিমকে হত্যার হুমকির ঘটনায় ফেঁসেছিলেন আবদুল হকের মাদরাসার সহকর্মী মাওলানা সাদ উদ্দিন। আর ছাতকের ইউএনও এবং ওসিকে হুমকির দায়ে ফাঁসেন আবদুল হকের গ্রামের বাসিন্দা মোখলেসুর রহমান।
এরপর পুলিশ নিশ্চিত হওয়ার পর আটক করে তাকে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মোবাইলে হুমকিদাতা আবদুল হক সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানাধীন শাহবাগ জামিয়া মাদানিয়া ক্বাসিমুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক।
ফেসবুকে তার পোস্টগুলোর মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, সাহিত্য আলোচনা, রাজনীতি এবং ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা।
. . . . . . . . .