নতুন আশায় স্বপ্ন বুনছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ নভেম্বর ২০১৫, ৬:১৬ অপরাহ্ণবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শিগগিরই দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে চুড়ান্ত রূপ দিয়ে নতুন এক বিএনপি গড়বেন- এই আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের পুনর্গঠন শেষ করে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির আমুল সংষ্কারের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, সেই প্রত্যাশায় নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন বিএনপি নেত্রীর দিকে।
দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিশ্বাস করছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তার লন্ডন সফরে শুধু চিকিৎসা এবং পারিবারিক আবহেই সময় কাটাননি। দলের আপাদমস্তক পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী বিএনপি পুনর্গঠনের অরগানোগ্রামও ঠিক করে এনেছেন। যেখানে ‘ব্যর্থদের’ স্থলাভিষিক্ত হবেন দলের জন্য সত্যিকার অর্থেই নিবেদিতপ্রাণ নেতারা। আর যোগ্য ও মেধাবীদের সমন্বয়ে গড়া হবে যুগোপযোগী এক বিএনপি।
দুই মাসেরও বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান শেষে শনিবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে একপ্রকার বিশ্রামেই আছেন তিনি। লন্ডনে তিনি তার চোখের ও পায়ের চিকিৎসা করিয়েছেন। দেশে ফেরার পর এখন পর্যন্ত দলের কোন নেতা তার সাক্ষাৎ পাননি।
দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ষষ্ঠ কাউন্সিল করার চিন্তা ভাবনা চলছে বিএনপিতে। এতে পুরো দলকে ঢেলে সাজানো হবে। এ মাসেই দলীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে চুড়ান্ত রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বিএনপি এখন পর্যন্ত মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে। দলের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছরের কমিটির বয়স এখন সাড়ে চার বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছয় মাস পরপর দলের নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে তিন বছর আগে।
দলের প্রাক্তন মহাসচিব প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের নেতৃত্বে চলছে সাংগঠনিক কর্মকা-। বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের বেশ কয়েকজন সদস্য। সাংগঠনিক কর্মকা- বা আন্দোলন দূরে থাকুক তাদের অনেকে নীতিনির্ধারণী বৈঠকে পর্যন্ত অংশ নিতে পারেন না। কয়েক দফা কারাভোগের পর কেউ কেউ সীমিত পরিসরে সক্রিয় থাকলেও অনেকেই এখন নিষ্ক্রিয়। একই পরিস্থিতি দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অনেকের। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নিজেদের নিরাপদ রাখছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা করছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’দফায় সরকার বিরোধী আন্দোলনে ‘ব্যর্থ’ হওয়ার পর দলের এই পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন সফর শেষে ফিরে আসায় নেতাকর্মীদের মাঝে নব আশার সঞ্চার হয়েছে। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর দলের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেন, সেই কৌতুহলী প্রশ্ন এখন দলের মধ্যে বেশ আলোচিত ইস্যু।
যেমনটি বলছিলেন বিএনপির একেবারে মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মী এবং ‘অন্ধ সমর্থক’ আনোয়ার হোসেন। রাজধানী মালিবাগ এলাকায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। কথোপকথনের এক পর্যায়ে এই প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন করছিলেন, নেত্রী কি শিগগিরই কাউন্সিল করবেন?
তার ভাষায়, ‘যোগ্য লোক দিয়ে দ্রুত কমিটি করতে হবে। ঢাকা মহানগর আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। দলের মধ্যে বিশেষ করে গুলশান কার্যালয়ে কিছু খারাপ লোক আছে। এদের চিহ্নিত করে সাইডে বসিয়ে রাখতে হবে। ম্যাডাম লন্ডন থেকে ভাইয়ার সঙ্গে (বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান) আলোচনা করে সব ঠিক করে এনেছেন মনে হচ্ছে।’
আনোয়ারের কথার সঙ্গে মাথা নেড়ে সায় দেন পাশে বসে থাকা মোহাম্মদ গাফফারও। তিনি জানান, দলের জন্য এখন বিএনপি নেত্রী কী পদক্ষেপ নেন সেটি দেখার জন্যই তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। এই দুই কর্মীর বিশ্বাস, সঠিকভাবে দল পুনর্গঠন করলে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি।
তবে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের আগে দলের তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গত ৯ আগস্ট সারাদেশে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলাকে কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন হলেই কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। কিন্তু ‘হামলা-মামলা আর গ্রেফতারে’ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটিগুলো করা সম্ভব হয়নি। পরে মৌখিকভাবে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলেও এখনও অনেক কমিটি অসামাপ্ত রয়েছে গেছে। যদিও এজন্য পুলিশি হয়রানিকে দায়ী করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির ৫ম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের পর ২০১০ সালের ৩১ জুলাই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে, ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল মহানগর নাট্যমঞ্চে ও ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তিনটি সভা হয়। ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের জন্য ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধান করে সমন্বয় কমিটি গঠন ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের প্রধান করে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ড্রাফটিং সাব-কমিটির একটি বৈঠকও হয়। তারপর থেমে যায় সে প্রক্রিয়া। বিগত দুই বছর ধরে কয়েকবার কাউন্সিলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বিএনপি।
পুনর্গঠন নিয়ে জানতে চাইলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এই মুহূর্তে দলের সবচেয়ে বড় অপিরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা যে এই বিষয়টির দিকে তাকিয়ে আছেন তা বোঝা যাচ্ছে। বিএনপি নেত্রী দেশে ফিরেছেন, দ্রুতই তিনি এ ব্যাপারে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবেন।
. . . . . . . . .