রইল বাকি আরও ১১
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজামীর আপিল শুনানি শেষ, অন্যরাও দিন গুনছে
এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন আরও ১১টি আপিল। এর মধ্যে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যভাগের আগেই এই আপিলের নিষ্পত্তি হবে।
এর বাইরে সুপ্রিম কোর্টে এখন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, মীর কাসেম আলী ছাড়াও সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, মোবারক হোসেন, আবদুল জব্বার, মাহিদুর রহমান, ফোরকান মল্লিক, খান মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ও সিরাজ মাস্টারের আপিলও বিচারাধীন।
এর মধ্যে সিরাজ ও ফোরকানের মামলায় জেল আপিল হয়েছে। জব্বারের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। সর্বশেষ শনিবার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরসহ ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল।
তবে সাঈদীর মামলায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। আপিল বিভাগে নিষ্পন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্রমানুসারে একটির শুনানি শেষে পরবর্তী মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। এই হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামীর পরে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের আপিলের শুনানি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্নœ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়। রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার বিধান রয়েছে।
চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় : আপিল বিভাগে আসা আসামিদের মধ্যে আবদুস সুবহান, আজহারুল ইসলাম ও কাসেম জামায়াতে ইসলামীর নেতা। কায়সার ছিলেন এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী।
আবদুল জব্বার ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য। মোবারক স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা। আপিল বিভাগে এখন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের শুনানি চলছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শুনানি।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নিজামীর আপিল মামলা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে পারে। এটা আমার প্রত্যাশা। যদি এর মধ্যে অন্য কোনো মামলা এসে যায় তাহলে ভিন্ন কথা।
তিনি বলেন, নিজামীর আপিল মামলার শুনানি চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দিন শুনানি হয়েছে। চলতি সপ্তাহেও হবে। আসামিপক্ষের পর আমি শুনানি করব। তবে আমি বেশি সময় নেব না।
নিজামীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, নিজামীর মামলায় কেবল শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানিতে কতদিন লাগতে পারে তা বলা যায় না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ঘাতক সংগঠন আল-বদর বাহিনীর প্রধান, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুট ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ দণ্ড দেওয়া হয় তাকে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৬টির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয় আটটি অভিযোগ।
প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারে প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নিজামী ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি।
রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। আপিলে নিজামীর খালাস চাওয়া হয়। নিজামী গ্রেফতার হন ২০১০ সালের ২৯ জুন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে আটক দেখানো হয়।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি সে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছরের ২৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগে নিজামীর বিচার শুরু হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
পাঁচ আপিলে সর্বোচ্চ সাজা চারটিতে : ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে নিষ্পন্ন হওয়া পাঁচটির মধ্যে চারটিতে সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। আদালতের আদেশে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া আপিলে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আপিল করেননি পাঁচজন : মানবতাবিরোধী অপরাধের চার মামলায় দণ্ডিত পাঁচ আসামি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেননি। তারা হলেন- জামায়াতের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান, ফরিদপুরের নগরকান্দার বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান আলী। পলাতক এই আসামিরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
-বাংলাদেশ প্রতিদিন
. . . . . . . . .