কেন্দ্রীয় বিএনপিতে নেতৃত্বশূণ্য সিলেট
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণবিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন থেকে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন সিলেটের নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তারা কেন্দ্রের পাশাপাশি সিলেটের রাজনীতিতেও মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছিলেন। জনপ্রিয় ও আলোচিত নেতাদের মৃত্যু, ‘নিখোঁজ’, আত্মগোপন ও পদত্যাগের কারণে কেন্দ্রের রাজনীতিতে এখন নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়েছে সিলেট। এই নেতৃত্বশূণ্যতা দীর্ঘদিনেও পূরণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলের নেতারা। কেন্দ্রে নেতৃত্বশূণ্যতার সংকট সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে এমন ধারণা সিলেটের নেতাদের।
বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে একসময় দাপটের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন- খন্দকার আব্দুল মালিক, এম. সাইফুর রহমান, আবুল হারিছ চৌধুরী, সমশের মবিন চৌধুরী, এম. ইলিয়াস আলী। কেন্দ্রের রাজনীতির পাশাপাশি তারা সিলেটে দলের কান্ডারির ভূমিকা পালন করেন। তাদের হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। এসব নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন রাজনীতিতে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই রাজনীতির পরিধি জেলা ও মহানগর পর্যন্ত। ফলে নানা কারণে জনপ্রিয় এসব নেতাদের অনুপস্থিতি সিলেটে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনেকটা অভিভাবকশূণ্য হয়ে পড়েছে সিলেট।
দলীয় সূত্রে জানা যায়- বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন খন্দকার আব্দুল মালিক। সিলেট-১ আসনের (সদর-কোম্পানীগঞ্জ) দুইবারের সংসদ সদস্যও ছিলেন তিনি। সিলেটে বিএনপির বীজ তার হাত ধরেই বপিত হয়েছিল। একপর্যায়ে খন্দকার মালিকের হাত থেকে সিলেট বিএনপির নেতৃত্ব চলে যায় সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম. সাইফুর রহমানের হাতে।
সিলেট-১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে সাইফুর রহমান দাপটের সাথেই সিলেট বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন বেশ শক্তিশালী অবস্থায় ছিল সিলেট বিএনপি। তিনি নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়েই ধীরে ধীরে সামনের কাতারে চলে আসেন আবুল হারিছ চৌধুরী ও এম ইলিয়াস আলী। আবুল হারিছ চৌধুরী ঢাকায় বসেই সিলেটের রাজনীতিতে মেকানিজম করতেন। আর ইলিয়াস আলী ছিলেন রাজপথের নিয়ন্ত্রণকর্তা।
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিলেট বিএনপির পুরোপুরি হাল ধরেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী। নেপথ্যে থেকে তাকে সহযোগিতা করেন হারিছ চৌধুরী। ওয়ান-ইলেভেনের পর হারিছ চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালান। হারিছ চৌধুরী এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা কারো জানা নেই।
ওয়ান ইলেভেনের পর বিধ্বস্থ দলকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পান এম. ইলিয়াস আলী। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। তার নেতৃত্বের ছোঁয়ায় ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা উজ্জিবিত হয়ে ওঠেন। সরকারী আলীয়া মাদরাসা মাঠে খালেদা জিয়ার লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম ঘটান তিনি। কিন্তু ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বও দীর্ঘস্থায়ী হননি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে গাড়ি চালক আনসার আলীসহ তিনি নিখোঁজ হন। এরপর থেকে সিলেট বিএনপিতে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’র পর সিলেট বিএনপির হাল ধরার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী। সিলেটে বিএনপির একটি বড় অংশকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পদত্যাগ ও রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়ে সিলেট।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সদস্য ছাড়া বিএনপির সম্পাদকীয় পদে সিলেটী নেতা হিসেবে রয়েছেন সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন। সজ্জ্বন এই নেতা দলের বিভিন্ন দু:সময়ে সিলেটের রাজনীতির হাল ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের মাঝে সাড়া ফেলতে সক্ষম হননি তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম বলেন- জাতীয় রাজনীতিতে যারা সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদের নিয়ে আমরা সবসময় গর্ব করি। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশেই তারা সিলেটের রাজনীতিতে দিকনির্দেশনা দিতেন। রাজনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই কারো অনুপস্থিতিতে রাজনীতি থেমে থাকে না। তবে বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী পরিষদে সিলেটের প্রতিনিধিত্বের যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হওয়া প্রয়োজন। এজন্য সিলেটের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের কেন্দ্রে মূল্যায়ন করা উচিত।
. . . . . . . . .