নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অন্য প্রকাশকরাও
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০১৫, ৯:১০ পূর্বাহ্ণভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বিশেষ ধরনের বই প্রকাশে বিরত থাকার মতো সিদ্ধান্ত না নিলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অভিজিৎ রায়সহ মুক্তচিন্তার লেখকদের বইয়ের প্রকাশকরা। তারা সরকারের ‘দায়িত্বহীনতাকেই’ দায়ী করছেন শনিবারের এই পরিস্থিতির জন্য। তবে উগ্রবাদীদের হুমকি-ধামকি এবং আক্রমণে পিছপা হবেন না বলে দৃঢ়ভাবে জানান অনেক প্রকাশকই।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিন ব্লগারকে তার কার্যালয়ে কুপিয়ে জখম করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় খবর পাওয়া যায় শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনকে। দুই প্রকাশনী থেকেই জঙ্গিদের হামলায় নিহত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশ করা হয়েছিল।
একই দিনে এভাবে প্রকাশ্যে দুই প্রকাশকের উপর বর্বরোচিত হামলা প্রকাশনা শিল্পের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না সে প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে।
অভিজিৎ রায়ের ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ এবং ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’ বইয়ের প্রকাশক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলামেইলকে এই বিষয়ে বলেন, ‘আমরা মনে করি পাবলিশিং ইজ দ্য ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অ্যান্ড অপিনিওন। বলার এবং প্রকাশ করার অধিকার সবারই আছে। বিভিন্ন মত এবং মতাদর্শের বই থাকবে। তাই বলে প্রকাশক এবং লেখকদের ওপর আক্রমণ করাটা কোনো সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না। যুক্তি দিয়ে খণ্ডন না করে প্রকাশক এবং লেখকদের আক্রমণ করে হত্যা করা হচ্ছে কারণ তারা দুর্বল। তাদের চলার জন্য গাড়িও নাই, নিরাপত্তা বলয়ও নাই। তাদের আক্রমণ করা সহজ।’
এই প্রকাশক আরো বলেন, ‘আমরা সকল বই প্রকাশ করার আগে ভালো করে পড়ি এবং এডিট করি। আমরা কোনো মূল্যবোধকে আঘাত দিতে চাই না। বিভিন্ন দর্শন প্রকাশিত হবে, আলোচনা হবে এবং দর্শন চর্চা হবে এটাই স্বাভাবিক। তা না হলেতো দর্শন চর্চাই বন্ধ হয়ে যাবে।’
নিরাপত্তার বিষয়ে অঙ্কুর প্রকাশনীর এই প্রকাশক সব শেষে বলেন, ‘আমি ভয় পাইনি। তবে নিরাপত্তাও বোধ করছি না।’
থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে কেউ হুমকি দেয়নি যে তিনি ডায়েরি করবেন।
অন্যদিকে সংহতি প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশকের দায়িত্বে থাকা ফিরোজ আহমেদ প্রকাশকদের ওপর হামলার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন।
তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘সবকিছুর জন্য সরকার দায়ী। সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।’
প্রকাশকদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের সব মানুষের মতো আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাজিয়া মিছিলে (মিছিলের প্রস্তুতি সমাবেশে) হামলা থেকে শুরু করে সকল সাম্প্রদায়িক হামলা সরকারের ব্যর্থতাই প্রকাশ পায়।’
অভিজিৎ রায় ইন্টারনেট, ম্যাগাজিন এবং দৈনিক পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তার লেখার বিষয় ছিল আধুনিক বিজ্ঞান, নাস্তিকতা, সমকামিতা এবং দর্শন। তিনি খুন হয়েছেন গত একুশে বইমেলার শেষ সময়ে টিএসসির সামনে। শনিবার যেই প্রকাশকদ্বয় হামলার শিকার হয়েছেন তারা অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ছিলেন।
মৃত্যুর আগে প্রকাশিত অভিজিতের লেখা বইগুলো হলো : আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী (২০০৫), মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭), স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮), সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০), অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১), বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২), ভালবাসা কারে কয় (২০১২), শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪), ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে (২০১৫)।
এখন প্রকাশকরাও যারা বিভিন্ন সময় মুক্তচিন্তকদের বই ছেপেছেন তারা ভেতরে ভেতরে আতঙ্কে আছেন। সামনে বইমেলায় তারা এ ধরনের বই প্রকাশ করবেন কি না তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। তবে এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে মানসম্পন্ন প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে।
. . . . . . . . .