শমসের মবিনের চিঠিতে ছয় ভুল
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০১৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণস্বাস্থ্যগত কারণে স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি করলেও বিএনপি চেয়ারপাসনর খালেদা জিয়াকে লেখা শমসের মবিন চৌধুরী চিঠিতে ছয়টি ভুল বানান অন্য বার্তা দিচ্ছে।
চিঠিটি, অন্য কেউ তৈরি করে দিয়ে তাতে তাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, চিঠিতে যে সকল ভুল বানান রয়েছে তা বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত সুশিক্ষিত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিনের সঙ্গে মানানসই নয়। বরং চাপের মুখে ভুল বানান সম্বলিত ফরমায়েশি পদত্যাগপত্রে তিনি সই করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে চিঠির ভুল বানান সংশোধনেরও সুযোগ পাননি তিনি।
যদিও চিঠিটির প্রতিলিপিতে দেখা গেছে, টাইপ করা কাগজটিতে খালেদা জিয়াকে মান্যবর সংশোধনের পর পরিচয় হিসেবে ‘মাননীয় চেয়ারপার্সন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’ লেখা হলে ‘চেয়ারপার্সন’ শব্দের পর যতিচিহ্ন কমা (,) না থাকায় তা কলম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চিঠির ভুল বানানগুলো আর সংশোধন করা হয়নি।
চিঠিটি শুরুতে সাধু ভাষায় লেখা হলেও পর প্রমিত ভাষায় লেখা হয়েছে।
বুধবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে এ চিঠিটি পাঠান শমসের মবিন।
পরে বৃহস্পতিবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা গণমাধ্যমকে জানান তিনি।
শমসের মবিন চৌধুরী দাবি করেন, “কারও চাপে নয়, একান্ত স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি।”
চাপের কথা অস্বীকার করলেও বিদেশ যেতে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি জানি না, কেন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। আমার চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। অস্ত্রোপচার করতে হবে। কেন দিচ্ছে না সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন। তারা (সরকার) বড়ভাই খুঁজবে, না আমার পাসপোর্ট দেবে- কে জানে।”
শমসের মবিনের চিঠি ও ভুল বানান
“মানব্যর,
বেগম খালেদা জিয়া
মাননীয় চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
মাননীয় চেয়ারপার্সন,
আমার সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করিবেন।
আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি গুরূতর ভাবে (শুদ্ধ: গুরুতরভাবে) আহত হয়েছিলাম। সে কারণে আমাকে বিভিন্ন সময় দেশে বিদেশে নানা বিধ (শুদ্ধ: নানাবিধ) চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বর্তমানে আমার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে।
আমার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে আমি অনতি বিলম্বে (শুদ্ধ: অনতিবিলম্বে) রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অবসর গ্রহণের প্রেক্ষিতে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সকল পদ থেকেও পদত্যাগ করলাম।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার স্বাস্থ্যগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে মুক্তিযোদ্ধের (শুদ্ধ: মুক্তিযুদ্ধের) মূল্যবোধ কে (শুদ্ধ: মূল্যবোধকে) সামনে রেখে দেশ ও জাতীয় কল্যাণে কাজ করার প্রয়াস আমার চিরকাল থাকবে।
আপনার শুস্বাস্থ্য (শুদ্ধ: সুস্বাস্থ্য) ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
ধন্যবাদান্তে,
সমশের এম চৌধুরী, বীর বিক্রম
ঢাকা, বাংলাদেশ।”
শমসের মবিন চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম খেতাব দেয়। এর আগে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর পদ থেকে সরিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। পরে পররাষ্ট্র সচিব পদে উন্নীত হন এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে অবসর নিয়ে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দেন।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শমসের মবিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরি মেয়াদ শেষে করে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। সে সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে শমসের মবিনকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।
২০১০ সালের জুন মাসে বিএনপির ডাকা এক হরতাল কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর মহাখালী রেলগেটে পুলিশের হামলার শিকার হন শমসের মবিন চৌধুরী। লাঠিপেটার পর তাকে আটক করে পুলিশ। পরে গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শমসের মবিনকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
শমসের মবিন বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনের কারণে নানা চাপ ও হুমকির মধ্যে ছিলেন।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বনানীর ডিওএইচএস মসজিদ রোডের একটি বাসা থেকে শমসের মবিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর পাঁচ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। গত ২২ মে তিনি কারগার থেকে মুক্তি পান। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কারাগারেই ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন তিনি। তাই জামিনে মুক্তির পরেও রাজনীতিতে আর সক্রিয় হতে পারেননি। সর্বশেষ তিনি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
. . . . . . . . .