বাংলাভাই ছিল, বড়ভাই-ছোটভাই আসছে, আরও কত কিছু আসতে পারে : শমসের মবিন
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০১৫, ৯:৫২ পূর্বাহ্ণশমসের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম। রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়ে দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হঠাৎ করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শমসের মবিন চৌধুরী।
আপনি কি, দেশী-বিদেশী কোনো চাপের মুখে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন, কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন…?
দেশে রাজনীতিকের কি এতই অভাব? অবাক ব্যাপার আমার পদত্যাগ নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেল…। ষড়যন্ত্র, কীসের ষড়যন্ত্র? বাংলাভাই ছিল, বড়ভাই-ছোটভাই আসছে, আরও কত কিছু আসতে পারে…
১৯৭১ সালে আমাকে মৃত্যদণ্ড দেওয়ার মতো চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু আমি মাথা নত করিনি। চাপের রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না। একদমই স্বেচ্ছায়, শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি মুক্তিযোদ্ধা, আহত হয়েছিলাম। সাম্পতিক সময়ে সেটার অবনতি হয়েছে। আমি সিলেটেও যেতে পারিনি, আমার বাবার কবর জিয়ারত করতে যেতে পারিনি। চোখের সমস্যা রয়েছে। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।
চিকিৎসার জন্য দেশে বাইরে যাচ্ছেন কি?
চার মাস হয়ে গেছে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছি। এখনও পাইনি। পাসপোর্ট হাতে পেলে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাব।
কোন দেশে যাবেন ?
আমি সাধারণত ব্যাংককে চিকিৎসা করাই। ওখানেই যাব।
আপনার দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় দাবি কথা হচ্ছে, বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আপনাকে দিয়ে সেই ষড়ন্ত্রের সূচনা হয়েছে কি?
না, আমি কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার হইনি। সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতিতে থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনৈতিক দিকটা দেখাশোনা করতেন, এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া এই-মুহূর্তে দেশের বাইরে আছেন। এমন একটি সময় হঠাৎ করে দল থেকে সরে দাঁড়ালেন, দলের প্রতি কোনো ক্ষোভ থেকেই কি …?
ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অনেক দিন ধরে দেশে বাইরে আছেন। টাইমিংয়ের কোনো তাৎপর্য নেই, একদমই না। সাম্প্রতিকালে আমার শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি ঘটেছে। আমি আমার স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) মুখে বিস্তারিত বলেছি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত বিষয়টি চিঠিতেও লিখেছি…
ভবিষ্যতে অন্যকোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন কি-না ?
না, এই রকম কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। আমি আগেই বলেছি, শরীর যদি আমাকে সেই সুযোগ দেয়, আমি যদি সুস্থ থাকি, তাহলে এক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে দেশ ও জাতীর কল্যাণে সব সময় কাজ করার প্রয়াস রয়েছে। এটা যে দলের থেকেই করতে হবে এমনটা নয়।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি জোট করায়— একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেআপনি বিব্রত ছিলেন কি-না?
এটা আসলে দলীয় ব্যাপার। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আর্দশিক জোট নয়, এটা রাজনৈতিক জোট।
আপনি কি দলে সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছেন?
দল থেকে আমি সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছি। দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পদত্যাগ করিনি।
বিএনপি কি সঠিক রাজনীতির পথে আছে, নাকি ভুল পথে ?
না, আমি বিএনপির রাজনীতির কথা বলছি না। দেশে যাতে সুষ্ঠু রাজনীতি থাকে সেটাই জনগণ দেখতে চায়। হত্যার রাজনীতি দেখতে চায় না, নির্যাতনের রাজনীতি দেখতে চায় না। আইনের শাসন দেখতে চায়, সুশাসন দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যেই আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু করি । সেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধটাকে সামনে রেখে আমরা যদি কাজ করতে পারি— দেশের মানুষ শান্তি পাবে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। তবে জাতীয় ঐক্যের এটা বিরাট প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের মতো একটি সম্ভাবনাময় দেশে সামাজিক সমস্যা, রাজনৈতিক সমস্যা মেটানোর জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন।-
দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম
. . . . . . . . .