পাল্টে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসনে বিএনপির লবিংয়ের পদ্ধতি
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০১৫, ২:১৬ অপরাহ্ণপরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রশাসনে বিএনপির লবিংয়ের ধরণও পাল্টে গেছে। আগে সভা-সমাবেশে কিংবা পূর্ব নির্দ্ধারিত বৈঠকে অংশ নিয়ে কংগ্রেসম্যান অথবা মার্কিন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছে বিএনপি নেতৃবৃন্দ সরাসরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন কংগ্রেসম্যানদের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া। জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময়েই কংগ্রেসম্যানরাও কঠোর সমালোচনা করেছেন সরকারের বিভিন্ন কর্মকৌশলের। তবে ঐসব সাক্ষাতকার অথবা বৈঠকের পূর্বশর্ত থাকতো যে, মিডিয়ায় কিছুই প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই সে শর্ত ভঙ্গ করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। নিজেদের জাহির করার জন্যে তারা মিডিয়াকে সবকিছু জানিয়ে দেন। এর ফলে কংগ্রেসম্যানরা বিব্রত হয়েছেন।
কম্যুনিটির মিডিয়া দেখলেই তারা মুখ খুলতে চান না। এমনকি, বিশেষ সম্পর্ক ব্যতিত রাজনীতিকদের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহও দেখাতেন না। এমনি অবস্থায় ৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনা ঘটে কয়েক মাস আগে। এ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপারে সিনেট ও কংগ্রেসে বিরূপ মনোভাব তৈরী হয়। এখনও তা কাটেনি। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বিএনপি নব উদ্যমে দেন-দরবারে নেমেছে। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের অন্তত: দুই কংগ্রেসম্যান, ডেমক্র্যাটিক পার্টির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ম্যারিল্যান্ডের ৩ কংগ্রেস প্রার্থীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং এবং কংগ্রেসম্যান জেরাল্ড ন্যাডলারকে অভিনন্দন জানান বাংলাদেশের জন্যে কাজ করার জন্যে। ধন্যবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের সদস্য হিসেবে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার জন্যে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সামগ্রিক উন্নয়ন পরিক্রমার সাফল্য দেখতে আগ্রহী বলে কংগ্রেসম্যানদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান অধ্যাপক দেলোয়ার।
এসব শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ বিনিময়ের হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেই তার দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন বিএনপির এই নেতা। এর আগে অধ্যাপক দেলোয়ার সাক্ষাত করেছেন কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরী এবং কংগ্রেসম্যান ইভ্যাট ডি ক্লার্কের সাথে। তাদের সাথেও বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শুভেচ্ছা দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে আরো বেশী কাজের অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ করে, নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশীদের নানাবিধ সমস্যার প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
কংগ্রেসে সাউথ ফ্লোরিডার একটি আসনের ডেমক্র্যাট প্রার্থী এনেটি টেডিয়ো শুধু সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। কারণ, প্রাইমারিতে তার বিরুদ্ধে কেউ নেই। সামনের বছরের নভেম্বরে নির্বাচনের দিন অতিবাহিত হলেই তিনি প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এনেটি টেডিয়োর সাথে একান্তে কথা বলেন অধ্যাপক দেলোয়ার। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ধারণা রয়েছে। কারণ, তার নির্বাচনী এলাকাতেও বাংলাদেশী রয়েছেন। ম্যারিল্যান্ডের অষ্টম ডিস্ট্রিক্ট থেকে লড়ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কুমার বার্ভ। তার সাথেও কথা বলেছেন বিএনপির এই নেতা। তিনিও বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন বলে জানান। এরা দু’জনই কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসে সদস্য হবার অঙ্গিকার করেছেন। একইসাথে বাংলাদেশের যে কোন প্রয়োজনে তাদের অফিস সর্বদা খোলা থাকবে বলে অধ্যাপক দেলোয়ারকে অবহিত করেন।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, কংগ্রেসে পিছিয়ে থাকা সদস্যদের নিয়ে নয়া একটি মোর্চা গঠন করেছেন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং। পলিটিক্যাল এ্যাকশন কমিটির ব্যানারে এর নাম হচ্ছে ‘এ্যাট দ্য টেবিল’। ইমিগ্র্যান্ট কম্যুনিটি থেকে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অথবা জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন-তেমন রাজনীতিকদের নয়া এ প্ল্যাটফরমের এক অনুষ্ঠান হয়েছে গত সপ্তাহে। সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন অধ্যাপক দেলোয়ার। নির্মাণ ব্যবসায়ী এবং সমাজকর্মী হিসেবে সে অনুষ্ঠানেও তিনি বিএনপি দলীয় কাজে সচেষ্ট ছিলেন। সে সময় তিনি দুই ঈদে নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে ছুটি ঘোষণার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকার জন্যে গ্রেস মেংকে অভিনন্দন জানান। অতিসম্প্রতি এক লাখ স্বাক্ষরসহ একটি আবেদন হোয়াইট হাউজে গেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে দুই ঈদে জাতীয়ভিত্তিক ছুটির একটি বিল কংগ্রেসে উত্থাপনের আহবান জানান কংগ্রেসওম্যানকে। উল্লেখ্য, মার্কিন কংগ্রেসে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে গ্রেস মেং দায়িত্ব পেয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দেখভাল করার।
অধ্যাপক দেলোয়ার ২১ অক্টোবর বুধবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক একটি শুনানীতে অংশ নেন। এ শুনানীর পর কংগ্রেসম্যান এবং হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টার সাথে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে, বিএনপিকে কেন সন্ত্রাসের মদদদাতা সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন। সে সময় অধ্যাপক দেলোয়ার তাদেরকে অবহিত করেছেন যে, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল এবং এ দল কখনোই জাতীয়, আঞ্চলিক অথবা আন্তর্জাতিক কোন সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত ছিল না, এখনও নেই।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, দু’বছর যাবত বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র শাখার কোন কমিটি না থাকায় ৫ খন্ডে বিভক্ত হয়ে সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজ চলছে। এ কারণে প্রায় সকলেই হতাশ। জাতীয়ভিত্তিক কোন ইস্যু ব্যতিত আন্তরিক অর্থে কেউই ততটা সোচ্চার নন। তবে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন নীরবে মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার করছেন দলীয় স্বার্থে। এ প্রসঙ্গে ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এনআরবি নিউজের এ প্রতিনিধিকে অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবস্থায় ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত হই। মাস্টার্স করার পর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের একটি কলেজে অধ্যাপনার সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৮৬ সাল নাগাদ দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকতে পারিনি। তবে ১৯৮৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাথে জড়িয়ে রয়েছি। এছাড়া, নিউইয়র্কে সবচেয়ে বড় জাতীয়ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দু’বছর নেতৃত্ব দিয়েছি। এখনও কয়েকটি আঞ্চলিক ও সামাজিক সংগঠনে জড়িত থাকার পাশাপাশি দলীয় কর্মকান্ড চালাচ্ছি। অধ্যাপক দেলোয়ার বলেন, বিএনপির জন্যে বড় দুর্দিন এখন। এ অবস্থায় কে নেতা হলাম, সেটি বড় কথা নয়, দলকে আগে বাঁচানোই বড় কথা। সে আলোকেই আমি সাধ্য অনুযায়ী মূলধারায় বিএনপির জন্যে কাজ করছি।
. . . . . . . . .