রুবাবা দৌলার ভেতর-বাহির
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০১৫, ৯:১৩ পূর্বাহ্ণপ্রতিটি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তবে কেউ কেউ ছাড়িয়ে যান নিজের স্বপ্নকেও। রুবাবা দৌলা তেমনি একজন। ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল আইনজীবী হওয়ার। প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম তার ফুফু।
যে কারণে সংগীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্নও হয়তো কখনও কখনও উঁকি দিয়েছে মনে। যদিও আত্মার খোরাক হিসেবে গানকে ধরে রেখেছেন এখনও।
নিয়মিত চর্চা করেন গানের। প্রযোজনা সংস্থা জি সিরিজের ব্যানারে এর আগে মুক্তি পেয়েছে তার মিক্সড অ্যালবাম ‘যাবে যদি চল’। অ্যালবামটিতে রুবাবা দৌলা মোট দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
তবে এসব পরিচয়ই তার গৌণ। রুবাবা দৌলার প্রধানতম পরিচয় তিনি বাংলাদেশের করপোরেট জগতের এক মহাতারকা। বর্তমানে তিনি টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারটেলের চিফ সার্ভিস অফিসার এবং এম কমার্স ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের প্রধান।
টেলিকম সেক্টরে ১৭ বছরের ক্যারিয়ার তাকে দিয়েছে খ্যাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং এমবিএ করেছেন। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন স্টকহোম স্কুল অব ইকোনমিক্স এবং লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকে। টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন লিমিটেডের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন।
সবশেষে ওই প্রতিষ্ঠানের চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার পদেও কর্মরত ছিলেন। পেশাগত কাজের বাইরে তিনি সামাজিক নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ভীষণ স্টাইলিশ রুবাবা দৌলা গলফ খেলেন নিয়মিত। বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট।
এছাড়া স্পেশাল অলিম্পিক, জাগো ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃৃক্ত। টাই চ্যাপ্টার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের অন্যতম পরিচালক।
রুবাবা দৌলা ভালবাসেন গান গাইতে, শুনতে, ঘুরতে। তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার গানের রেওয়াজ করি। গজল, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ও পুরনো দিনের আধুনিক গান খুব ভাল লাগে।
রুবাবা দৌলা বলেন, ঘর সাজাতে পছন্দ করি। বিদেশে গেলে মোমবাতি আর তৈজসপত্র কিনি। শিল্পী কামরুল হাসানের ভাগনি রুবাবা দৌলার বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে শিল্পীদের চিত্রকর্ম।
ঢাকার গুলশানে রুবাবার বাড়িতে অ্যান্টিক আর আধুনিকতা যেন মিলেমিশে আছে।
জানালেন, সাজ-পোশাকেও তিনি এই রকম। নিত্যনতুন ফ্যাশন এলেই সঙ্গে সঙ্গে সে স্রোতে গা ভাসান না। নিজেকে কিসে মানাবে সেটি বুঝে সাজ-পোশাক পরেন।
বন্ধুদের আড্ডায় প্যান্ট, টপ, স্কার্ট, কুর্তা পরলেও তার প্রিয় পোশাক শাড়ি। অফিস থেকে শুরু করে বিশেষ দাওয়াত সব জায়গাতেই শাড়ি পরেন। মাঝে মধ্যে সালোয়ার-কামিজ বেছে নেন।
দেশীয় সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী রুবাবা বলেন, জামদানি, শিফন, জর্জেট, সিল্ক ও গাদোয়াল শাড়ি ভাল লাগে। তবে অফিসের জন্য সুতির শাড়ি বেছে নিই। আরামের জন্য কোন কিছুতে ছাড় দিই না। সাজেও কোন বাহুল্য থাকে না।
চোখে ম্যাক ও শ্যানেলের পানিরোধক কাজল, ম্যাকের লিপস্টিক, ববি ব্রাউন ব্র্যান্ডের আইশ্যাডো, ল্যানকমের মাশকারা। এই হলো তার সাজ। ভারসাসে, বারবেরি ও গুচির সুগন্ধি তার প্রিয়। জুতার প্রতি খুব দুর্বল তিনি।
জুতা দেখলে কেনা চাই-ই চাই। উঁচু হিলের জুতা পছন্দ করেন। তবে ব্র্যান্ডের হতে হবে এমন কোন কথা নেই। আরামদায়ক হলেই কিনে ফেলেন।
রাতে দেরি করে ঘুমাতে গেলেও ছেলে উসাইদের জন্য সাতটার মধ্যে ওঠেন। ওর স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি তদারকি করে তিনিও তৈরি হন অফিসের জন্য। গ্রিন টি দিয়ে শুরু হয় সকাল।
সারা দিনে প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর গ্রিন টি খান। খাওয়া দাওয়া করেন বেশ মেপে। খাবারের তালিকা থেকে চিনি ও শর্করা বাদ দিয়েছেন। নিজেকে সুস্থ রাখতে রয়েছে সব ধরনের আয়োজন।
নিজে কম খেলেও রান্না করতে ভালবাসেন। রান্নাটা শিখেছেন মা মমতাজ সুলতানার কাছ থেকে। বাবা সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মসিহ উদ দৌলা।
খেতে পছন্দ ভাত, মাছ ও মাংস। উসাইদ তো মায়ের হাতের গ্রিল করা খাবার ছাড়া খেতেই চায় না। রাতের খাবার ছেলের সঙ্গেই খান। অবসরে পরিবারকে সময় দেন। ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যান। আর ভাইবোনদের সঙ্গে আড্ডা।
মোবাইল শিল্পের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে রুবাবা বলেন, মোবাইল আগে ছিল পারসন টু পারসন। বর্তমানে বিজনেস টু বিজনেস। ইন্টারনেট, ডাটা, অ্যাপস যেন মানুষের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ।
ইন্টারনেটের ৯৫ ভাগ সেবা আসে মোবাইল সার্ভিস থেকে। যার নেতৃত্বে রয়েছে পুরো মোবাইল শিল্প। ডেভেলপ হয়েছে আইসিটি শিল্পের। তবে এসব উন্নয়নের পথে মাঝে মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অশান্ত রাজনীতি। তবুও শিল্পটি অনেক এগিয়েছে।
জীবনে অনেক দিয়েছেন শিল্পকে। আবার পেয়েছেনও ঢের। তবে থেমে থাকার মানুষ নন তিনি। নিজের মতো করেই এগিয়ে যেতে চান রুবাবা দৌলা।
. . . . . . . . .