২২ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও ঘরে ফেরা হয়নি সিলেটের ফজলু মিয়ার
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০১৫, ৭:৫০ অপরাহ্ণআইনি জটিলতার জালে আটকে ২২ বসন্ত কারাগার প্রকোষ্ঠে কেটেছে তার। পরে একটি সংস্থার আইনি লড়াই শেষে মিলেছে মুক্তি। তবুও ঘরে ফেরা হয়নি সিলেটের ফজলু মিয়ার। এতোগুলো বসন্ত শেষে ঘরই হারিয়েছে তার। আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে।
১৯৯৩ সালের সাত নভেম্বরের সকালটা আর অন্যদিনগুলোর মতই শুরু হয়েছিলো মানসিক ভারসাম্যহীন ফজলু মিয়ার। সিলেট কোর্টের আঙ্গিনায় পান সিগারেট বিক্রির কোন এক ফাঁকে সন্দেহবসত পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। পাল্টে যায় পিতা মাতার পরিচয়হীন ফজলুর জীবন। তখনও হয়তো তিনি ভাবেননি এতটা দীর্ঘ হবে তার আটক জীবন।
আদালত সূত্রগুলোর বরাতে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই ২২ বছরে অন্তত ১৯৫ বার কোর্টে হাজির করা হয় তাকে। ২০০২ সালে একবার জামিন পেলেও ফেরা হয়নি ঘরে। ২০০৫ সালে তার মুক্তির আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
২২ বছর আগের পরিচয়হীন ফজলুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন নিঃসন্তান সহকারী পোস্ট মাস্টার সৈয়দ গোলাম মাওলা। সিলেটে ঘুরে বেড়ানোর সময় ফজলুকে দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুরের নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। সন্তানের আদরে বড় করলেও ফজলুর হারিয়ে যাওয়া ২২ বসন্তের কোন একটিতে নিজেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
আর সেকারণেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার আশ্রয়হীন হয়েছেন তিনি। ঠাঁই মিলেছে তেতলী ইউনিয়ন পরিষদে।
সহপাঠি দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন রাসেল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফজলুর জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতের গল্প।
তিনি জানান, ফজলু ছোট বেলা থেকে কোর্ট প্রাঙ্গণে পান বিক্রি করে বেড়াত। সেই সাথে সহকারী পোস্ট মাস্টার সৈয়দ গোলাম মাওলার ফরমায়েশ খাটত। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর সন্তানহীন গোলাম মাওলানা ফজলুকে দত্তক নেন।
গোলাম মওলা মারা যাওয়ার আগে তাকে কিছু জায়গাও লিখে দিয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন ফজলুকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। বেশ কিছুদিন পর তার পালক মা খোঁজ পেয়ে বাড়িতে নেন ফজলুকে। তিনিও মারা গেলে ফজলুকে পাগল সাজিয়ে জেলে দেন আত্মীয়রা।
সাবেক ইউপি সদস্য রাসেল আরও জানান, ‘ফজলুকে অনেক খুজেছি। কিন্তু পাইনি। বছর তিনেক আগে ফজলু মারা গেছেন বলে খবর পান। এরপর খোঁজ করা বন্ধ করেন রাসেল। পরে এক বাউল শিল্পী জেলে যাওয়ার পর আবারও ফজলুর খোঁজ পান যে কারাগারে রয়েছে। তারপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা তমিজ উদ্দিনের সহযোগিতায় মাস দুই আগে যোগাযোগ করে জেলে থাকার সত্যতা পান। এরপর তার জামিনের ব্যবস্থা করেন।’
যোগাযোগ করেন ২০০৫ সাল থেকে এ প্রক্রিয়া চালিয়ে আসা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সঙ্গে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৫ অক্টোবর কারাগার থেকে বেরিয়ে মুক্ত জীবনের স্বাদ নেন ফজলু।
মুক্তির এই কদিন পর কেমন আছেন ফজলু? তেতলি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঘুরা ফেরা করে সময় কাটলেও জানেন না তার পরবর্তী ঠিকানা কোথায়। জানেন না সুস্থভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হবে কি না আর। এখনও অসীম শূন্যতায় ঘুরপাক খাচ্ছে ফজলু মিয়ার জীবন। . . . . . . . . .