শতকোটি টাকার দুর্নীতি : প্রশাসক হাসিনাকে তলব
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০১৫, ২:৪২ অপরাহ্ণঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্পের নামে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে রোববার রাজধানীর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে তলব করে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদক উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে হাসিনা দৌলাকে আগামি ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা করা হয়েছে ওই নোটিশে।
এদিকে ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলা ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিবকে আহ্ববায়ক করে গঠিত ৪৮৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপিসহ ১০ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিসহ সকল ধরনের রেকর্ডপত্র পুনরায় তলব করে পৃথক আরো এক চিঠি দিয়েছে দুদক।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিবের (জেলা পরিষদ অধিশাখা) কাছে ওই নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক, যা ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুদকের কাছে সরবরাহ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো নথিপত্র এখনো সরবরাহ করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তাই দুদক থেকে আবারো ওই নথিপত্র আগামি ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরবরাহ করতে পুনরায় চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া চিঠিতে যে সকল নথিপত্র চাওয়া হয়েছে তা হলো- আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ স্থাপন প্রকল্প, নবাবগঞ্জ যন্ত্রাইল করবস্থান প্রকল্প, নবাবগঞ্জ আধুনিক মার্কেট মেরামত প্রকল্প, ঢাজা জেলার বিভিন্ন সংসদীয় এলাকার ৫০টি কম্পিউটার সরবরাহ, নবাবগঞ্জ মার্কেট নির্মাণ প্রকল্প, দোহার সুতারপাড়া শাসুল হুদার গাজীরচেক মিনা মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প, নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা মাঝপাড়া যুব সংঘ উন্নয়ন প্রকল্প, নবাবগঞ্জ উপজেলা চৌকিঘাটা কবরস্থান উন্নয়ন প্রকল্প, নবাবগঞ্জ তুইতাল মেইন রাস্তা থেকে তুইতাল বাজার পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প এবং নবাবগঞ্জ নয়নশ্রী ইউ, বাংলাবাজার থেকে ঘোষপাড়া কালি মন্দির হয়ে উত্তর বাহা রাস্তার ইট সলিং প্রকল্পের প্রক্কালন দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সংক্রান্ত কাগজপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন শিট, কার্যাদেশ, রানিং বিল, চূড়ান্ত বিল, পরিমাপ বইসহ সকল প্রকল্পের নথি ও নোটশিটসহ যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, হাসিনা দৌলার বিরুদ্ধে ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে শত কোটি টাকার বিল ছাড়ের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, জেলা পরিষদ প্রশাসক হাসিনা দৌলার স্থানীয়ভাবে কথিত পিএস বোয়াইল ধামরাইয়ের মাহবুবুর রহমান (মনি) বিভিন্ন পিআইসির সভাপতির নামে এবং তার নিজ নামে স্বাক্ষর করে ১ হাজার ৫০টি চেকের মাধ্যমে মোট ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৫০ টাকা গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছরে তিনি এ চেকগুলো তুলেছেন। অন্যান্য বছরেও অনুরূপ চেক গ্রহণ করেছেন তিনি। এছাড়া পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়িত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্পগুলোয় ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের ঢাকার নবাবগঞ্জের ‘যন্ত্রাইল কবরস্থান উন্নয়ন’প্রকল্পের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ কাজ পায় মেসার্স ফারুক অ্যান্ড ব্রাদার্স। যেখানে কোনো কাজ না করেই প্রায় দেড় বছর আগেই প্রথম চলতি বিলে কাজের ৭৯ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ লাখ ২১ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের ঢাকার নবাবগঞ্জ ‘অফিসার্স ক্লাব সংস্কার’প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে কাজ পাওয়া মেসার্স প্রগ্রেসিস এন্টারপ্রাইজ সংস্কার কাজ না করেই জেলা পরিষদ থেকে চূড়ান্ত বিল নিয়ে নেয় তার সহায়তায়।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের নবাবগঞ্জ আধুনিক মার্কেট মেরামত প্রকল্পের ঠিকাদার মেসার্স স্বর্ণা এন্টারপ্রাইজ সরকারি বিভিন্ন বিধিবিধান লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও তারই সহায়তায় বিরাট অঙ্কের অর্থ লোপাট করে হাসিনা দৌলা।
২০১১-১২ অর্থবছরে ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে নবাবগঞ্জ ‘তুইতাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম নির্মাণ’প্রকল্পের যথাক্রমে অংশ-১ ও অংশ-২ এর জন্য পৃথকভাবে ৪০ লাখ টাকা করে মোট ৮০ লাখ টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।
এ ছাড়া নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা মাঝপাড়ায় ২ লাখ টাকার যুব সংঘ উন্নয়ন প্রকল্পে, নবাবগঞ্জ উপজেলার চৌকিঘাটায় ২ লাখ টাকার কবরস্থান উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো কাজ না করেই অর্ধেক টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। ঢাকা জেলা পরিষদ ‘শ্রীশ্রী পাগলনাথ মন্দির ও ওই দেবীর মন্দির’নামে দুটি মন্দিরের উন্নয়নের নামে চার লাখ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
এভাবে ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গালিমপুর ইউনিয়নের নৌয়াদ্দা ভূঁইয়া হাটি ফুটবল ক্লাব, মণ্ডলপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, শ্রীশ্রী গঙ্গাদেবীর মন্দিরের সংস্কার ও উন্নয়ন এবং নবাবগঞ্জ বক্সনগর ইউনিয়ন পরিষদের বন্ধনপাড়া যুবসংঘ, বন্ধনপাড়া প্রগতি সংঘ, কমরগঞ্জ খেলার মাঠ, বন্ধনপাড়া শ্মশানঘাটের উন্নয়নে নামে চার লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেখিয়ে পুরো অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।
স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
. . . . . . . . .