বড়লেখার গৃহকর্মীকে বর্বর নির্যাতনের নেপথ্য কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়া

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৪৭ অপরাহ্ণমৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি’র বিছরাবন্দ গ্রামের মনসুর আলীর মেয়ে গৃহকর্মী নাজমা বেগমকে বর্বর নির্যাতনের নেপথ্য কারণ হলো কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়া। খারাপ কাজে রাজি না হওয়া মেয়েটিকে প্রায় তিন মাস গৃহবন্ধী করে রাখা হয়েছিলো। এর আগে প্রায় এক বছর ধরে চলে বর্বরোচিত নির্যাতন। তারপর বিনা চিকিৎসায় ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। প্রতিদিন রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটানো হতো। এছাড়া গরম পানি ও কুনতির চেকা দিয়েও নির্যাতন করা হতো মেয়েটিকে।
পরিবারের সদস্যরা এলাকাবাসীর সহযোগীতায় বন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেয়েটি হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৬নং ওয়ার্ডের ৭নং বেডে চিকিৎসাধীন আছে। মেয়েটির অবস্থা এখন আশংকাজনক জানিয়েছেন তার বড় বোন আলোয়া বেগম।
বুধবার সকালে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজমার সাথে মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিনিধির। গুরুতর অসুস্থ নাজমা কান্না জড়িত কন্ঠে বর্বর এ ঘটনার বর্ণনা দেয়। সে জানায়, ঘটনার শুরু হয় রমজান মাস থেকে। আমাকে আমার বাড়ি থেকে রাবেয়া বেগমের বাড়িতে কাজের কথা বলে নেওয়া হয় এক বছর হবে। কিছু দিন পর রাবেয়া বেগম আমাকে নিয়ে তার মেয়ে লুৎফা বেগমের শশুর বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে নিয়ে সেখানে কাজ করার কথা বলেন। রমজান মাসের একদিন লুৎফা অপরিচিত চার জন যুবকে নিয়ে আসেন বাসায়। এ সময় তিনি এদের সাথে আমাকে খারাপ কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি এতে রাজি না হয়ে বাসা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এসময় যুবকদের সহযোগীতায় লুৎফা আমাকে ধরে এনে নির্যাতন করেন। আমাকে নির্যাতন করার সময় তার মা রাবেয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বাধা দেননি। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি। আমাকে আমার বাবার কাছে দিয়ে আসার জন্য কিন্তু পরদিন সকালে রাবেয়া আমাকে ঘুমে রেখে বড়লেখায় চলে আসেন। এর পর গৃহবন্দি করে আমার ওপর চলে অনেক নির্যাতন কিন্তু তারা আমাকে চিকিৎসা করায়নি। গত ২মাস পূর্বে লাকসামের বাসার পার্শ¦বর্তী লোকজন ঘটনা বুঝতে পারায় আমাকে গোপনে বড়লেখায় নিয়ে আসা হয়। বড়লেখায় অনার পরও আমাকে গৃহবন্দি করে নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বড়লেখা থানায় তিন জনকে আসামীকে করে একটি মামলা দায়ের করেছেন নাজমার বাবা মনছুর আলী। মামলার আসামীরা হলেন-পাঁচপাড়া গ্রামের আজির উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৬০), বিবাহিত মেয়ে লুৎফা বেগম (৩০), রাবেয়ার জা রুবী বেগম (৪০)। নাজমার বাবার দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাৎক্ষণিক গৃহকর্তী রাবেয়া বেগমকে গ্রেফতার করেছে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মনিরুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত রাবেয়া বেগম থানায় পুলিশের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। এ মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিছরাবন্দ গ্রামের হতদরিদ্র মনসুর আলী অভাবের তাড়নায় মেয়ে নাজমা বেগমকে ২ হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মীর কাজে দেন পাঁচপাড়া গ্রামের আজির উদ্দিনের বাড়িতে। প্রায় এক বছর পূর্বে মেয়টিকে (নাজমাকে) ঝিয়ের কাজের জন্য আজির উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম নিজ জিম্মায় তার বাড়িতে নিয়ে যান। এর প্রায় ৩ মাস পর নাজমার পরিবারের অনুমতি ছাড়াই তাকে নিজের মেয়ে লুৎফার শশুর বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে পাঠিয়ে দেন রাবেয়া বেগম। সেখানে রাবেয়ার মেয়ে লুৎফা বেগম নাজমাকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নাজমা এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন।
. . . . . . . . .