রাজন হত্যা: কামরুলকে আনতে সৌদি যাচ্ছে পুলিশ
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০১৫, ১১:১৮ অপরাহ্ণসিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের তিন পুলিশ কর্মকর্তা সৌদি আরব যাচ্ছেন। চলতি মাসেই তারা সৌদি আরব গিয়ে কামরুলকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সদর দপ্তর) মাহবুবুল করিমের নেতৃত্বে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিনকে সৌদি আরব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার পর সৌদি আরব পালিয়ে গিয়ে গত ১৩ জুলাই আটক হন কামরুল। এরপর থেকে তিনি সৌদি পুলিশের জিম্মায় রয়েছেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক স্ট্যাটাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছিলেন, সৌদি আররে আটক শিশু রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে সৌদি রয়েল কোর্ট। ইন্টারপোল কাগজ হাতে পেয়েছে। খুব বেশি দুই সপ্তাহ লাগবে।
কামরুল ছাড়া রাজন হত্যা মামলার বাকি আসামিরা হলেন- কামরুলের ভাই মুহিদ আলম, আলী হায়দার, শামীম আহমদ, পাভেল আহমদ, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী। এদের মধ্যে পলাতক কামরুল, শামীম ও পাভেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।
গত ৮ জুলাই সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে ভ্যান চুরির অভিযোগে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। নির্মমভাবে পেটানোর দৃশ্য ভিডিও করেন হত্যাকারীদের সহযোগীরা। তারা নিজেরাই সেই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। ভ্যান চুরির অপবাদ দিয়ে রাজনকে পেটানো হলেও এই মামলার অন্যতম আসামি ময়না চৌকিদার তাকে বলাৎকার করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে পেটান বলেও অভিযোগ আসে।
নির্মমভাবে পিটিয়ে রাজনকে হত্যার পর তার লাশ গুম করার চেষ্টা করার সময় জনতার সহায়তায় পুলিশের হাতে আটক হন মুহিদ আলম।
রাজনকে পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ও গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি নিয়ে সরব হলে তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশে। এর মধ্যে মুহিদের ভাই সৌদি প্রবাসী কামরুল যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন এমন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি পালিয়ে যান। ১৩ জুলাই তাকে সৌদি প্রবাসীরা আটক করেন। প্রায় একই সময়ে সিলেটে আটক হন মুহিদের স্ত্রী পপি বেগম। মুহিদের নিজ বাড়ি শেখপাড়া এলাকা থেকে পপিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজনকে হত্যার বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদ আসে সমাজের সব মহল থেকে। মূলত প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ১৪ জুলাই দুপুরে রাজনের শহর সিলেটেও ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বেশ বড়সড় একটা সমাবেশ হয়। হাজারো মানুষ এতে যোগ দেন।
নিহত সামিউল আলম রাজনের বাড়ি সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ডের পাশে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদে আলী গ্রামে। সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন প্রাইভেটকারচালক। তার দুই ছেলের মধ্যে রাজনই ছিল বড়।
১৬ আগস্ট আলোচিত এই মামলায় ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে সৌদি পুলিশের হাতে বন্দি কামরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হলেও তাকে পলাতক উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে ১ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে দেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত। নির্ধারিত দিনে রাজনের বাবা আজিজুর রহমান ও বরখাস্ত হওয়া এসআই আমিনুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ মামলায় আদালত রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৮ জনের জাবানবন্দি শুনবেন বলে জানিয়েছেন পিপি মফুর আলী। . . . . . . . . .