আফসোসের অন্ত নেই ‘অবাধ্য কন্যার’ পিতার
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০১৬, ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ‘অবাধ্য কন্যা’ রিতাকে শেষ পর্যন্ত ত্যাজ্য করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন পিতা মিন্টু দাশ। পুলিশি হেফাজতে নেয়ার পরও পারলেন না বশে আনতে। সিলেটের কোতোয়ালি থানা থেকে নানীর জিম্মায় চলে গেছে। তবে, নামেই কেবল নানীর জিম্মা। নিজের জিম্মায় অজানায় পা রাখলো সিলেটের আলোচিত এই রিতা দাশ। আফসোসের অন্ত নেই পিতারও। কিন্তু কী করবেন আরও দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে তার। তাদের তো বিয়ে দিতে হবে। এ কারণেই তাকে ত্যাজ্য করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। রিতাকে নিয়ে এই মুহূর্তে নাটকীয়তার অন্ত নেই সিলেটে। হয়েছে মারামারি। পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি। রিতা দাশ। বয়স আঠারো পেরিয়ে উনিশে পড়েছে। সিলেটের একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠের দ্বাদশের ছাত্রী। পিতা মিন্টু দাশ। সিলেটের সুবহানীঘাট এলাকার মৌবন আবাসিক এলাকায় তাদের বাস। পিতা মিন্টু দাশ একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করেন। নিতান্তই স্বল্প আয়ের মানুষ তিনি। এরপরও ৫ মেয়ের মধ্যে বড় দুটিকে বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ে রিতা দাশ। মেধাবী যেমন, তেমন সুন্দরীও। এ কারণে মেয়ে রিতাকে নিয়ে পিতা আশাবাদী ছিলেন। বড় হয়ে সে পিতার দুঃখ কিছুটা হলেও ঘুছাতে পারবে। মিন্টু দাশের পাশের বাসায় বাস করেন সাথী নামের আরেক নারী। তিনি নাটক ও মডেলিং অঙ্গনে পা মাড়িয়েছেন অনেক আগেই। বাসা পাশাপাশি হওয়ায় রিতার সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার। বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। এই সুযোগে সাথীর পা দেয়া পথে নজর পড়ে রিতা দাশের। স্বপ্ন জাগে মডেল হওয়ার। সেই স্বপ্ন থেকে রঙিন জগতে পা বাড়ায় রিতা। নিজেকে একজন মডেল কন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য নামে ওই পথে। ইতিমধ্যে দু-একটি সিলেটী নাটকেও অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। বাইরের রঙিন দুনিয়ায় তিনি হয়ে উঠেন ‘রাজকন্যা’। যখন-তখন ঘরের বাইরে ডাক পড়ে তার। যেতে হয় রাত-বিরাতে। কোথায় যায়, কী করে এসব নিয়ে মিন্টু দাশ পড়েন বেকায়দায়। মেয়ের অজানা ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দেয় শংকা। ‘খারাপ’ হয়ে যেতে পারে মেয়ে এমন আশঙ্কা তার মনে উঁকি দেয়। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই মেয়েকে আটকানোর চেষ্টা করেন। লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার জন্য চাপ দেন। এমনকি বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালান। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেছে। রিতা এখন আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে। পিতা-মাতার কথায় কান দিচ্ছে না। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শুরু করেছে। তোয়াক্কাও করছে না কাউকে। এই অবস্থায় ২০-২২ দিন আগে রিতার সঙ্গে পিতা-মাতার কথা কাটাকাটি হয়। অনেকটা জোর করেই রিতাকে ঘরে আটকানোর চেষ্টা চালান তারা। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলাফল হয়েছে উল্টো। রিতা পিতা মিন্টুর কথা মানেনি। ছেড়ে দেয় ঘরও। নিজের ঘর ছেড়ে দিয়ে উঠে মডেলিং জগতে অগ্রজ সঙ্গী সাথীর বাসায়। সাথীও তাকে সাদরে বরণ করে। রেখে দেয় নিজের কাছে। বিষয়টি অজানা থাকেনি সুবহানীঘাট মৌবন এলাকার মানুষের কাছেও। কানাঘুষা চলে এলাকায়। এ সময় আরও বেশি স্বাধীনচেতা হয়ে উঠেছে রিতা দাশ। স্থানীয় উঠতি যুবকদের চোখে পড়ে সে। আর এসবের খবরও যাচ্ছিল পিতা মিন্টু দাশের কাছে। মেয়েকে রঙিন দুনিয়া থেকে রক্ষা করতে তিনি ৫ দিন আগে পুলিশের শরণাপন্ন হলেন। ছুটে গেলেন সিলেটের কোতোয়ালি থানায়। একটি অভিযোগ দাখিল করলেন। ওই অভিযোগে তিনি রিতার আশ্রয়দাতা হিসেবে সাথীর নাম উল্লেখ করলেন। কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ মৌবন আবাসিক এলাকার মিন্টু দাশের অভিযোগ তদন্তে দেন এসআই হালিমা বেগমকে। অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন হালিমা। রোববার তিনি মিন্টু দাশকে সঙ্গে নিয়ে মৌবন এলাকার সাথীর বাসায় যান। ওখানে গিয়ে এসআই হালিমা রিতা দাশকে পান। পিতাকে সামনে রেখেই কথাবার্তা বলছিলেন তিনি। এমন সময় সেখানে পিতার সঙ্গে আশ্রয়দাতাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পুলিশের সামনে সংঘর্ষ হয়। মাথা ফেটে যায় মিন্টু দাশের। তাকে প্রথমে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মেয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ কেইসের কথা চিন্তা করে ওসমানীতে চিকিৎসা নেননি মিন্টু দাশ। একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এই অবস্থায় কোতোয়ালি থানার এসআই হালিমা বেগম রিতাকে হেফাজতে নিয়ে থানায় চলে আসেন। থানায় নিয়ে আসার পর পুলিশের কাছে পিতা সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে রিতা দাশ। পুলিশকে বলে, সে প্রাপ্ত বয়স্কা। পিতা তাকে খারাপ কাজ করাতে চাচ্ছে। এ কারণে সে ঘর থেকে চলে গেছে। কোনো ভাবেই সে পিতার কাছে যাবে না। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেও রিতা এসব কথা বলেন। এদিকে, রাতে কথা হয় মিন্টু দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ৫ মেয়ে। দুটিকে মান সম্মানে বিয়ে দিয়েছি। তৃতীয় মেয়েটি বুদ্ধিমতি হওয়ায় তাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছিলাম। সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে।’ রাতে পুলিশের ওসি, এসআই সহ থানায় বৈঠক হয়। বৈঠকের একপর্যায়ে রিতা জানায়, সে পিতা মাতার কাছে যাবে না। সে নানীর কাছে থাকবে। উপস্থিত থাকা নানীও তাকে তার জিম্মায় নিতে রাজি হন। এরপর পুলিশ তাকে নানীর জিম্মায় ছেড়ে দেয়। আর অসহায় মিন্টু দাশও নিজ থেকে প্রত্যাহার করে নেন তার অভিযোগ। কিন্তু ওখানেই শেষ নয়, নানীর জিম্মায় আসা রিতা দাশ ফের চলে গেছে পূর্বের আশ্রয়দাতার কাছে। পুলিশি ঝামেলা এড়ানোর পর এখন সে আরও স্বাধীনচেতা। সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই হালিমা বেগম জানিয়েছেন, মেয়েটি এডাল্ট। এ কারণে তার মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর নিজ থেকে পিতা মিন্টু দাশ অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। এদিকে, গতকাল সিলেটের আদালতে যান মিন্টু দাশ। উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করেন। মেয়ে রিতাকে চিরতরে ত্যাজ্য করার প্রক্রিয়া চালানো শুরু করেছেন। বিকালে মিন্টু দাশ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রিতার পরেও দুটি মেয়ে রয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে রিতাকে ত্যাজ্য করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নিজের রক্ত বেইমানি করলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে প্রত্যেক পিতা-মাতার কষ্ট হয় বলে জানান তিনি। . . . . . . . . .