সিলেট-৪ আসন: আ.লীগের ঘাঁটি দখলে চোখ বিএনপি-জামায়াতের

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩১ পূর্বাহ্ণসীমান্তবর্তী তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ফলাফল বলছে পর্যটন ও খনিজ সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চল ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। গেল ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ বার বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই ঘাঁটি দখলে চোখ ফেলেছে বিএনপি ও জামায়াত।
কয়েকটি ইসলামী দলের প্রার্থীরাও সরব রয়েছেন আসনটিতে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে হাফ ডজনের বেশি নেতা মাঠে আছেন। আর জামায়াত, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আন্দোলন একক প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে তৎপর রয়েছে।
১৯৭৯ সালে ২য় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির নাজিম কামরান চৌধুরী। পরে ১৯৯৬ সালে এম. সাইফুর রহমানের হাত ধরে আসনটি পুণরুদ্ধার করেছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন সাইফুর রহমান। ৭ম সংসদ নির্বাচনে একাধিক আসনে বিজয়ী হওয়ায় আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। এরপর উপনির্বাচনে আসনটি ফের আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। আর সর্বশেষ আসনটি থেকে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী হয়েছিল ২০০১ সালে।
এবার আসনটি পুণরুদ্ধারে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির অন্তত ৭ নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, মহানগরের সাবেক সেক্রেটারি বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা আবদুল হক।
এর মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে জৈন্তাপুরের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন। সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন না পেলে সিলেট-৪ থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। এমন আভাস দিয়েছেন তার ঘনিষ্টজনদের।
গেল কয়েক মাস ধরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে তিনি বিশাল সমাবেশ করেছেন।
গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরেও তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রার্থী হওয়ার জানান দিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের ৩১ দফা নিয়ে তিন উপজেলার মানুষের কাছে যাচ্ছি, দলীয় বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। সিলেট-৪ আসনের মানুষ বিএনপির বিকল্প ভাবছে না, ধানের শীষেই তাদের আস্থা। প্রার্থী হিসেবে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে। বাকিটা সিদ্ধান্ত নেবে দল।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও ৫ আগস্টের পর যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে জৈন্তাপুর উপজেলায় কয়েকটি সভা-সমাবেশ করে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছেন।
এদিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলার দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় এলাকায় জনভিত্তি তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরী। এবার সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। গোয়াইনঘাট ছাড়াও বাকি দুই উপজেলায় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনের ভোটাররা এবার স্থানীয় প্রার্থী চাচ্ছেন। সে হিসেবে আমিই এগিয়ে রয়েছি। আমি ইউপি চেয়ারম্যান ও দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। দল আমার প্রতি আস্থা রাখলে আসনটি পুণরুদ্ধার করতে পারবো, ইন শা আল্লাহ।’
সিলেট-৪ আসনে একবারই দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৬ সালের ৭ম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও ভাল করতে পারেনি দলটি। তবে গত প্রায় তিন দশকে আসনটিতে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে শক্ত হয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এবার দলটির প্রার্থী।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে সকল রাজনৈতিক দল সবসময় এই অঞ্চলের বাইরের নেতাদের প্রার্থী করেছে। এবার এ আসনের ভোটাররা স্থানীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ।’
সিলেট-৪ আসনে ধর্মভীরু আলেম ভক্তদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। এই ভোট ব্যাংকে চোখ রেখে খেলাফত মজলিস সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আলী হাসান উসামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, ইসলামী ঐক্যজোট মাওলানা নাজিম উদ্দিন কামরান ও ইসলামী আন্দোলন সাঈদ আহমদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুজিবুর রহমান ডালিম।