যুদ্ধ বিরতি অপরিহার্য নয়, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণরাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধবিরতি অপরিহার্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পাশে রেখে এ কথা বলেছেন তিনি। খবর সিএনএনের।
সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের তিন দিনের মাথায় সোমবার হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। দেড় ঘণ্টা স্থায়ী সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধবিরতি তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতা কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তিচুক্তি ছাড়া এই সংঘাত থামবে না।”
ট্রাম্প বলেন, “এখানে আমরা যারা উপস্থিত আছি, তারা সবাই তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী শান্তির পথে পৌঁছানোর উপায় বলে মনে করি এবং সম্ভবত (রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে) এমনটা হতেও পারত; কিন্তু আপাতত তা হচ্ছে না।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “আর আমি জানি না যে এই অবস্থায় এটা (যুদ্ধবিরতি) প্রয়োজনীয় কি না। আমি নিজে যুদ্ধবিরতি পছন্দ করি। কারণ এর মাধ্যমে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা থামাতে পারেন; কিন্তু আমি এ-ও বিশ্বাস করি যে সবকিছুর শেষে আমাদের একটি টেকসই শান্তিচুক্তি প্রয়োজন যা স্থায়ীভাবে সহিংসতা বন্ধ করতে পারে। এটা খুবই সম্ভব এবং নিকট ভবিষ্যতেই এমন একটি চুক্তি হতে পারে।”
সোমবার হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন ট্রাম্প।
বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে উপস্থিত ছিলেন।
টানা কয়েক ঘণ্টা কয়েক দফা বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনে কাজ শুরু করেছেন তিনি।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউজে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক চলার মধ্যেই পুতিনকে ফোন করেন তিনি।
তবে কবে, কোথায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, সেই বিষয়ে কিছু জানাননি ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “ওই বৈঠকের পর আমাদের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে দুই প্রেসিডেন্টের (পুতিন ও জেলেনস্কি) আমি থাকব। আবারো বলছি, প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য এটি একটি খুব ভালো ও প্রাথমিক পদক্ষেপ।”
ট্রাম্প আরো লিখেন, “আজকের বৈঠকগুলোতে মূল আলোচনার বিষয় ছিল ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এ নিশ্চয়তা দেবে, যার সমন্বয় করবে যুক্তরাষ্ট্র।”
পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ‘পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য আমরা প্রস্তুত।’
হোয়াইট হাউজে সোমবারের আলোচনা বিষয়বস্তু তুলে ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ই আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। যুদ্ধ বন্ধের জন্য এটা প্রয়োজনীয় ‘সূচনা বিন্দু’ হবে।”
যেসব দেশ ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে বলে জানান জেলেনস্কি।
তিনি বলেন, “নিরাপত্তার নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে থাকবে মার্কিন অস্ত্র যা ইউক্রেনের কাছে নেই, যার মধ্যে রয়েছে বিমান ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা এবং অন্যান্য জিনিস যা আমি প্রকাশ করব না।”
জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় ড্রোন কিনবে। এ পদক্ষেপ ইউক্রেনের চালকবিহীন বিমানের উৎপাদনের জন্য অর্থায়নে সহায়তা করবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের আরো বলেন, “কিয়েভের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সম্ভবত ১০ দিনের মধ্যে তৈরি করা হবে।”
আন্তর্জাতিক/আবির