সিলেটে ভোট পাখিদের আনাগোনা

আব্দুল হান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:১২ পূর্বাহ্ণবেকায়দায় বিএনপি
সারাবছর দেখা না পেলেও শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। তাদেরকে অতিথি পাখি বলা হয়। একটি মৌসুমকে কেন্দ্র করে যাদের বিচরণ বেড়ে যায়। একই ভাবে দেশে নির্বাচন যজ্ঞের আয়োজন হলে সেই যজ্ঞে হুমড়ী খেয়ে পড়েন একদল প্রবাসী। সকল রাজনৈতিক দলের প্রবাসী নেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে। দেশের দুর্যোগ-দুর্বিপাক কিংবা তৃণমূলের সাথে তাদের যোগাযোগ না থাকলে নির্বাচন আসলেই ঝাঁকে ঝাঁকে দেশে আসেন প্রবাসী এই নেতারা। তাদের বলা হয় ভোট পাখি। ভোট পাখিদের ভিড়ে একসময় ত্যাগী এবং জনপ্রিয় নেতারাও পড়েন বেকায়দায়। টাকার জোরে অনেকেই মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে সমর্থ হন। ফলে স্থানীয় সমস্যা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে। একই অবস্থা চলছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে। তবে ভোট পাখিদের তৎপরতায় এবার সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে সিলেট বিএনপি।
সিলেট জেলার ৬টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সিলেট ১ (সদর) আসনে কোনো প্রভাবশালী প্রবাসী প্রার্থী মাঠে না থাকলেও খন্দকার মুক্তাদির অনেকটা নির্ভার। যদি তিনিও একসময় প্রবাসে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে নামার পর আর বিদেশমুখি হননি। সবকিছু গুটিয়ে মাঠে পড়ে আছেন দিবারাত্রি।
সিলেট-২ (বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) নির্বাচনী এলাকায় ইলিয়াসপতœী রুনা অনেকটা গোছানো মাঠে থাকলেও সেখানেও এখন বিএনপির প্রভাবশালী প্রবাসী এক নেতার পা পড়েছে। হুমায়ুন কবির নামের এই নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের উপদেষ্টা। হুমায়ুন কবিরের নামে ব্যাপক পোস্টারিং হচ্ছে এলাকায়। দু’একবার নিজ উপজেলা ওসমানীনগরেও ঢু মেরে গেছেন। শোডাউন করেছেন। সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে রীতিমতো প্রবাসী প্রার্থীদের নিয়ে যেন টাগ অব ওয়ার চলছে। এখানে সাবেক এমপি শফি চৌধুরী নির্বাচন করছেন না। এমনটিই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধূরী দুই টার্ম ধরে এখানে বেশ ভালো অবস্থানে। এরই মাঝে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম মাঠে নেমে বাগড়া দিয়েছেন। তিন উপজেলার বেশীর ভাগ নেতাকর্মী এখন তাঁর পক্ষেই মাঠে কাজ করছেন। এখানে সম্প্রতি জোরে শোরেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক। সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির মিফতাহ সিদ্দিকী, আব্দুল হাকিম চৌধুরীর সঙ্গে লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা, সিলেট জেলা কমিটির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদ. ব্যারিস্টার এম এ সায়েমের নামেও প্রচারণা চলছে। সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ- কানাইঘাট) আসনে আশিক চৌধুরী, চাকসুর মামুনুর রশীদ মামুনের সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান পাপলুও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
প্রবাসী বিএনপি নেতা ফাহিম আল চৌধুরী। এখানে সাবেক এমপি হারিস চৌধুরীর কন্যা সামিরা চৌধুরী প্রবাস থেকে এসেই ভোটের মাঠ জমিয়ে তুলেছেন। সিলেটে ছাত্রদল যুবদল এবং বিএনপির রাজনীতিতে মাঠের মানুষ হিসেবে পরিচিত পাপলুও একসময় প্রবাসে থাকতেন। এছাড়াও আরও দুএকজন নেতা উঁকি ঝুকি মারছেন। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) সংসদীয় আসনে ফয়সল আহমদ চৌধুরীসহ অন্য প্রার্থীদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের ফরেন এ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজার অহিদ আহমদ। তিনি লন্ডনে কয়েকবছর থাকলেও তার রাজনীতির শুরু নিজ এলাকাতেই। পরে রবদল হলে জেলা কেন্দ্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর বড় ভাই সদ্য প্রয়াত বিএনপি নেতা এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদের গোছানো মাঠেই তিনি চাষ করতে চাচ্ছেন। রশীদ আহমদের রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মসূচিতে তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশে এসে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছেন।
সিলেট জেলার বিভিন্ন আসনে সর্বশেষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নেতারা ছাড়াও দলের একাধিক মুখ সেখানে কাজ করছেন মনোনয়নের আশায়। মাঠে থাকা সব নেতাই বলছেন তাদেরকে এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে। মনোনয়ন যিনি পাবেন তারা তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, এখন যে কোনো সিনিয়র নেতা এলাকায় এলে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। কারণ এদের অনেকেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। দলের হাই কমান্ড তাদের সকলের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত। তারা অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্বেও দেশে আসতে পারেননি। আমাদের দলে এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। দলের পক্ষে যিনি ধানের শীষ পাবেন তার পক্ষেই আমরা থাকবো। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর সবকিছু নির্ভর করছে। আমরা সবাই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায়।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, আমরা এখন সবাইকে কাজ করতে বলেছি। কারণ দলের নেতাকর্মীদের উপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। তাদের পাশে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও অনেক নেতা যেতে পারেননি ফ্যাসিস্টদের কারণে। অনেকের ত্যাগ আছে। জনপ্রিয়তা আছে, এখন মুক্ত পরিবেশে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সিনিয়র নেতাদের পাশে পেয়ে উজ্জীবিত হচ্ছেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই চলবে। দল ভোটের আগে সিদ্ধান্ত দেবে। নির্বাচনের প্রার্থী সিলেকশনের জন্য বোর্ড থাকবে। তাঁরা প্রার্থীদের অবস্থা এবং অবস্থান অনুযায়ী মূল্যায়ন করবেন। তখন নেতাকর্মীরাও সঠিক নির্দেশনা পাবে। সে পর্যন্ত সবাই যার যার মতো কাজ করবেন। বিশেষ করে প্রবাসী নেতাদের অনেকেই দেশে আসতে পারেননি। তাই তাদেরকে সব এলাকায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর বেশি কিছু নয়। তবে প্রবাসী প্রার্থীদের মধ্যে মূল্যায়ন পেতে পারেন এমন কয়েকজন নেতাও আছেন- এটি যোগ করেন মিফতাহ সিদ্দিকী।
রাজনীতি/হা