ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগের পর থেকে লাপাত্তা মবশ্বির আলী
স্টাফ রিপোর্টঃ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ণসিলেটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং বাসা বাড়িতে হামলার পর থেকে উধাও হয়ে গেছেন নগরের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মবশ্বির আলী।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে গত ৫ আগস্ট থেকে সিলেটে পাচ্ছেনা পুলিশ ও যৌথবাহিনী। একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, গত ৫আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভবের মুখে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐদিন সিলেট নগরের সবকটি এলাকায় ভাঙচুর করা হয় । সিলেটে নগরের সরকারী বেসরকারী অফিস, আওয়ামলীগ নেকাদের বাসা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসায় হামলার পাশাপাশি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়। সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা, বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট ও লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি।
এ ছাড়া সিলেট জেলা পরিষদ এবং নগর ভবনেও হামলা-ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগ চালানো হয়। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই পৃথক মিছিল নিয়ে একদল মানুষ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত নেতাদের বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। হামলা-ভাঙচুর হয়েছে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলরের বাসভবনেও।
হামলা-ভাঙচুরের শিকার হয়েছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক গোলাম সোবহান চৌধুরীর বাসভবনও।
বাসাবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাদের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানো হয়।
এর মধ্যে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মবশ্বির আলীর মালিকানাধীন মেসার্স শাহপরান ফার্মেসীতে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়। এবং সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সিলেট নগরের বড় ফার্মেসিগুলোর মধ্যে এ দুটো ফার্মেসি ছিল।
মবশ্বিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয়ার পর তিনি গা ঢাকা দেন। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, মবশ্বির আলী ছাত্র জীবনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের (নাসির-নাদেল কমিটি) সহ সম্পাদক (জগলু-পান্না কমিটি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তাঁর জন্মস্থান ওসমানীনগর আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ সম্মেলনে আওয়ামীলীগের সিলেট জেলা শাখার গঠিত কমিটিতে তিনি তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের পদ পান।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিগত নির্বাচনে তিনি আওয়ায়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধূরী পক্ষে প্রচারের মুল দায়িত্বে ছিলেন। বিজয়ী হবার পর মেয়রের সঙ্গে ঘনিষ্টভবে কতাজ করছিলেন। প্রথম সারির নেতা হিসেবে দলের কর্মকান্ডেও অনেক সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকারের পদত্যাাগের আগেরদিনও সিলেট নগরে বের হওয়া তাদের দলীয় মিছিলে অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। বিএনপি সরকারের আগের মেয়াদকালে তিনি হামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন। এবারও আওয়ামলীগ সরকারের পদত্যাগের পর সিলেটে দায়েরকৃত বিভিন্ন হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায়, শেখ হাসিনা, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে তাকেও আসামী করা হয়েছে। ফলে তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
হোয়াটসআ্যপ তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ত্রাসীরা প্রথমে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করে তারপর অগ্নি সংযোগ করে সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত করে। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।