ওয়ারীর বলধা গার্ডেন : একবার মুগ্ধতা, শতবার ‘ছি’!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০১৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণঘরের জানালায় উঁকি দিলে বা বারান্দায় দাঁড়ালেই ফুলের বাগান, খোলা আকাশ, সবুজবেষ্টিত নিসর্গচিত্র কে না দেখতে চায়। আর তা যদি হয় ইটের জঙ্গল রাজধানীতে তাহলে তো কথাই নেই। অর্থ একটু বেশি দিয়ে হলেও ওই এলাকায়ই ভাড়া নেবেন, এ তো স্বাভাবিক। ধরুন, এরপর আপনি জানালায় উঁকি দিতে পারছেন না, পারছেন না বারান্দায় হাঁটতে। বাচ্চারা বারান্দায় গেলেই ধমক দিয়ে ঘরবন্দি করছেন। কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে রাজধানীর ওয়ারী থানার র্যাং কিন স্ট্রিটের বলধা গার্ডেনে।
একসময়ের ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ি বলধা গার্ডেন বর্তমানে কলঙ্কতিলক এঁকেছে পুরান ঢাকাবাসীর কপালে। এখন বলধা গার্ডেনের নাম শুনলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ন্যূনতম রুচিবোধসম্পন্ন যে কোনো মানুষ। কারণ, বলধা গার্ডেন এখন মাদকসামাজ্য, রুচিহীন তারুণ্যের অবাধ মেলামেশার স্থান!
১৯০৯ সালে ঢাকা জেলার বলধার (বর্তমানে গাজীপুর) জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী এই উদ্যান তৈরি করেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা জাতের ফুল ও দুর্লভ উদ্ভিদ এনে লাগান এখানে। এখানে আছে প্রায় ৮শ প্রজাতির ১৮ হাজার উদ্ভিদ। পদ্মপুকুরসহ ছোট ছোট জলাশয়গুলোতে ভাসে নানা রঙের পদ্মফুল। এ ছাড়া এখানে আছে বিরল প্রজাতির ক্যাকটাস, বকুল, ক্যামেলিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, অর্কিড, অ্যাথুনিয়া, আমাজান লিলি, আশোকসহ নানা প্রজাতির ফুল ও অর্কিড।
এই বাগানের ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি।
পুরান ঢাকার অভিজাত এলাকা খ্যাত ওয়ারীর বাসিন্দাদের নির্জন বিনোদন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল এই বলধা গার্ডেন। উদ্ভিদবিদদের জন্য এই উদ্যান ছিল রীতিমতো গবেষণার স্থান। বলা হয় পুরান ঢাকাবাসীর গৌরবের জায়গা ছিল এই বলধা গার্ডেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে পুরান ঢাকার মানুষ আসতেন এখানে। ভোরে অনেকে আসতেন প্রাতঃভ্রমণের জন্য।
সরেজমিনে বলধা গার্ডেনে গিয়ে দেখা যায়, এর ভেতর পুকুরের সিঁড়ির আড়ালে, বিভিন্ন ঝোপঝাড়, সরুস্থানে জুটিবদ্ধ হয়ে বসে আছে তরুণ-তরুণীরা। তারা শুধু বসেই নেই, দিনের আলোয় প্রকাশ্যে যৌনতায় মেতে উঠেছে!
আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এই গার্ডেনের মুখোমুখি বেশকিছু সুউচ্চ ভবন গড়ে উঠেছে। উদ্যানমুখি ওইসব ভবনের ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়াও অন্যান্য ফ্ল্যাটের তুলনায় বেশি। ওইসব ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের দিনের বেলাও সার্বক্ষণিক দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। কারণ, গার্ডেনের ভেতর মাদক গ্রহণ আর তরুণ-তরুণীদের খোলামেলা মেলামেশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা যে কোনো মানুষের জন্য অস্বস্তি ও বিব্রতকর। মনের অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে আসবে ‘ছি’!
স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব আহসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দিনের বেলায়ও বাসার জানালা খুলে রাখতে পারি না। কারণ বাসায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, বাসার ওই জানালার পাশে যেতেই ভয় পায় তারা। মনে করে সেখানে ভুত আছে!’
এ বিষয়ে বলধা গার্ডেন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে গার্ডেনের এক নিরাপত্তা কর্মী বাংলামেইলকে বলেন, ‘কি করবো বলেন, স্থানীয় নেশাগ্রস্ত আর সন্ত্রাসীদের দখলে এখন বাগানটি। তাদের কিছু বলার সাহস নেই কারও। আর সে কারণে পরিবার নিয়ে এখন আর কেউ আসে না।’
. . . . . . . . .