খোঁজ মিলেছে ফজলু মিয়ার পরিবারের, আশিঊর্দ্ধ বয়সী মা এখনও ছেলের অপেক্ষায়!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ণকোনো মামলা কিংবা সাজাপ্রাপ্ত আসামি না হয়েও ২২ বছর সিলেট কারাগারে বন্দি জীবন কেটেছে নিরপরাধ ফজলু মিয়ার। দু’বার আদালত নিরপরাধ ফজলুকে মুক্তির আদেশ দিলেও প্রকৃত অভিভাবকের অভাবে মুক্তি দিতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ফজলু মিয়াকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধির জিম্মায় মুক্তি দেয় আদালত। এবার মিলেছে ফজলু মিয়ার প্রকৃত অভিভাবকের খোঁজ। জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাউনিয়া গ্রামের মৃত বিশু মিয়া ও মজিরন বেওয়ার একমাত্র ছেলে ফজলু মিয়া। গত কয়েকদিন ধরে ফজলুকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি দেখে নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। ফজলু মিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের মৃত বিশু মিয়া এবং বাক প্রতিবন্ধী মজিরন বেওয়ার একমাত্র ছেলে ফজলু মিয়া। তাদের এক মেয়েও রয়েছে হামিদা বেগম। ১৯৭৮ সালে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায় ফজলু মিয়া। ১৯৮৪/৮৫ সালের দিকে ফজলুর মামা আব্দুল হালিম ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে গুলিস্তানের একটি মনোহারি দোকানে ফজলুকে দেখতে পায়। ওই সময় ফজলু জানিয়েছিল, সিলেটের সৈয়দ গোলাম মাওলার মালিকানাধীন ওই দোকানে সে কাজ করছে, গোলাম মাওলার কোনো সন্তান না থাকায় ফজলুকে ছেলে বানিয়েছে। পরে ১৯৮৭ সালে গোলাম মাওলাকে সঙ্গে নিয়ে ফজলু জামালপুরের বাড়িতে বেড়াতে এসে কয়েকদিন থেকেও যায়। শেষ বার ১৯৯০ সালে ফজলু একাই বাড়িতে এসেছিল। তারপর দীর্ঘদিন আর কোনো যোগাযোগ করেনি। এর দুই-এক বছর পর ফজলুর খোঁজ করতে তার মামা আব্দুস ছাত্তার সিলেটের সুরমা থানার ধরাধরপুর এলাকায় গোলাম মাওলার বাসা মীর বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে আব্দুস ছাত্তার জানতে পারেন, গোলাম মাওলা ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর পর ফজলু মিয়া উন্মাদ হয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছে তাই তার খোঁজ কেউ বলতে পারেনা। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ায় পরিবারের সবাই ধরে নিয়েছিলো ফজলু মিয়া আর বেঁচে নেই। আর ফজলু মিয়ার বাক প্রতিবন্ধী আশিঊর্দ্ধ বয়সী মা মজিরন বেওয়া ছেলে হারানোর শোকে কেঁদে হারিয়েছেন চোখের দৃষ্টি, বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়েছেন এই বৃদ্ধা।
গত কয়েকদিন ধরে টিভি এবং পত্রিকায় ফজলুকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, সেই প্রতিবেদনে ছাপা ফজলুর ছবি দেখে তার স্বজনদের বিষয়টি জানায় এক প্রতিবেশি। এরপর ফজলুর স্বজনরা সেই পত্রিকার প্রতিবেদনের কপিটি সংগ্রহ করে ছবি দেখে নিশ্চিত হয় প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবিটি তাদের ফজলু মিয়ার।
এদিকে স্বজনদের কাছে ছেলে ফজলু মিয়া বেঁচে আছে জেনে অবুঝ মনে ছেলেকে ফিরে পাবার আকুতি নিয়ে স্বজনদের কাছে বার বার ছুটে যাচ্ছে ফজলুর বৃদ্ধ মা। আর নিখোঁজ ফজলু মিয়ার সন্ধান পাওয়ার খবরে প্রতিদিন ফজলুর বাড়িতে ভিড় করছে প্রতিবেশিসহ অসংখ্য মানুষ।
এ ব্যাপারে ফজলুর মামা আব্দুল হালিম জানায়, ৩০-৩৫ বছর আগে ফজলু না বলেই বাড়ি থেকে চলে যায়, এরপর দুই-একবার বাড়িতে আসলেও দীর্ঘদিন বাড়িতে যোগাযোগ না করায় ধরে নিয়েছিলাম ফজলু আর বেঁচে নাই। ফজলুর নানা মৌলভী হাসমত উল্লাহ জানান, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ফজলু মারা গেছে আর ফিরে আসবেনা। কিন্তু পত্রিকায় ওই ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছি ফজলু বেঁচে আছে।
বিনা অপরাধে ২২ বছর কারাবন্দি জীবন কাটানো ফজলু মিয়াকে তার বৃদ্ধ মার কারছে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বজনসহ প্রতিবেশিরা।
এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ২২ বছর কারাবন্দি নিরাপরাধ ফজলু মিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিতে সিলেটে যোগাযোগ করা হচ্ছে, ফজলু মিয়াকে তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনতে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
. . . . . . . . .