স্বস্তি নেই কাঁচা বাজারে, লাগামহীন নিত্যপণ্য
মইনুল হাসান আবিরঃ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ৫:২২ অপরাহ্ণ
দফায় দফায় বেড়ে চলছে নিত্যপণ্যের দাম। আজ এক পণ্যের দাম বাড়লে কাল বাড়ছে আরেক পণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা বাজারে প্রায় সব সবজি। বাড়ছে আদা-রসুন-পেঁয়াজের দামও। মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ ছড়িয়েছে মাছ-মাংস-ডিমের বাজারেও। ঊর্ধ্বমুখী এই বাজারে এসে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ক্রেতারা বলছেন, সব পণ্যই তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তাদের সাংসারিক খরচ।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট)। সকালে সিলেটের মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, গোল বেগুন ১২০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৬০-৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১৫০-১৮০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি। লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা পিস। আজকের বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ৪০ টাকা কেজিতে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেখা যায় কিছু সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও অনেক সবজিরই দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত৷ গত সপ্তাহে লম্বা ও গোল দুই ধরনের বেগুনের দামই ছিল ৮০ টাকা কেজি। আজকে সেই দাম হয়েছে যথাক্রমে ১০০ ও ১২০ টাকা। বরবটি ও কচুরমুখী বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায় আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। লাউ বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকায় আজকে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
এছাড়া আজকে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা, দেশি আদা ২২০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আলু ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় গত সপ্তাহের তুলনায় ক্রস জাতের পেঁয়াজ ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা করে। দেশি ও ইন্দোনেশিয়ার আদার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০ ও ৪০ টাকা এবং চায়না রসুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়াও তেল, চিনি, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের বাড়তি দামে আটকে রয়েছে।
আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৬৭-১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে লাল ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম ১৪০ টাকা ডজন।
বেড়েছে মাছের দামও। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছগুলোর দাম বেড়েছে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। চাষের রুই-কাতলা থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আজকে বাজারে ইলিশ মাছ ১৫০০-২০০০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০ টাকা, কই মাছ ৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৬০০ টাকা, প্রতি কেজি চিংড়ি মাছ ১০০০-১৬০০ টাকায় যা আগে ছিলো ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যে। রুই মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কাতল মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, যা আগে ২৮০-৩২০ টাকা ছিল। দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি, বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০-৮০০ টাকা। যা ছিলো ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে।
আম্বরখানায় বাজার করতে আসা দিনমজুর খালেক বলেন, ইচ্ছা থাকলেও মাছ-মাংস সন্তানের মুখে দিতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে। একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো এখন সেই উপায় নেই। কমদামে ব্রয়লারও এখন কেনা যায় না। মাছের দামও বেড়েছে। আমরা এখন কী খাবো? এগুলো দেখার কেউ নেই। আমাদের নিয়ে সরকার ভাবে না। বাজারে এসে কোনোভাবেই পকেটের হিসাবের সাথে মিলাতে পারছি না।
মদিনা মার্কেট বাজার করতে আসা ব্যাচেলর ’আবুল আজহার রুমেল’ বলেন, বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে এখন কোনো কিছুই নিম্নবিত্তের নাগালে নেই। এমন একটা অবস্থা চলছে যে মাছ কিনবো না মাংস কিনবো ভেবে পাই না। কারণ দুইটার দামই বেশি। আগে যেমন ভাবতে পারতাম মাংসের দাম বেশি হলে মাছ কিনবো, কিন্তু এখন আর তা ভাবতে পারি না।
সিলেট সংবাদ





