দুই বাংলাদেশির কষ্টের যাত্রা পোল্যান্ডের পথে
সিডকে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:০৭ পূর্বাহ্ণআজাহার মাহাবুব মাসখানেক আগে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে পড়াশোনার জন্য। চাঁদপুরের এ যুবকের স্বপ্ন ছিল সেখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরবেন অথবা ইউরোপের কোনো দেশে চাকরি নেবেন। সেই মাহবুবের চোখে-মুখে এখন একরাশ আতঙ্ক আর অন্ধকার।
গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার পর মাহাবুব এখন জীবন নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন কি না সেই আতঙ্কে রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কিয়েভে রুশ বাহিনীর বোমা হামলা শুরু হলে মাহবুব জীবন বাঁচাতে ভাড়া করা বাসে ওঠেন পোল্যান্ড সীমান্তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্দেশিত পথ ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। একই পথে ছোটেন অন্য দেশের প্রবাসী ও কিয়েভের সাধারণ মানুষও। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মাহবুব রওনা দেন। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে তিনি পৌঁছান লাভিভ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে।
গ্রামটিতে পৌঁছার পরপরই মাহবুবের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৫৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন বাসে বসেই। কিন্তু বাসটি লাভিভ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরেই তাদের নামিয়ে দিয়েছে। এরপর তারা পায়ে হেঁটে লাভিভ শহরের দিকে এগোচ্ছেন। তিনি জানান, পোল্যান্ড সীমান্ত পৌঁছাতে হলে লাভিভ শহরে আগে পৌঁছাতে হবে। এরপর সেখান থেকে ছোট কোনো যানবাহন ভাড়া নিয়ে ছুটতে হবে পোল্যান্ডের সীমান্তের দিকে। লাভিভ শহর থেকে পোল্যান্ডের সীমান্ত প্রায় ৭৩ কিলোমিটার দূরে।
মাহবুব জানান, কিয়েভ থেকে আসার পথে খাবারের কোনো হোটেল পাননি তাঁরা। এতে চরম খাদ্যকষ্টে পড়েন। রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের কারণে তাঁদের গাড়িও ধীরগতিতে চলছিল। ফলে প্রায় ৫৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে যায়।
গতকাল বিকেলে প্রায় একই সময়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় রাজশাহীর নুরুল আমিন শাকিলের সঙ্গে। শাকিল জানান, তাঁরা কিয়েভ থেকে প্রায় ৩০ ঘণ্টায় লাভিভ শহরে পৌঁছান সেখানকার সময় বিকেল ৩টার দিকে। কিন্তু এরই মধ্যে লাভিভ শহরে শুরু হয়েছে রাশিয়ার বোমা বর্ষণ। আর জনগণকে সতর্ক করতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমে জরুরি সাইরেন বাজাতে শুরু করে। এতে লাভিভের মানুষও রাস্তায় ছোটাছুটি শুরু করে আতঙ্কে। শহরের ব্যাংকের বুথগুলোতে অর্থ তোলার জন্য উপচে পড়া ভিড় বাড়তে থাকে।
শাকিল বলেন, ‘কিয়েভ থেকে লাভিভ শহরের যে মূল রাস্তাটি, সেই রাস্তা ধরে আমরা আসতে পারিনি। যানজট ও রাশিয়ান বাহিনীর চেকপোস্টের কারণে বিকল্প পথে আসতে হয়েছে। রাস্তায় তেমন কোনো খাবারও পাইনি। শুকনা খাবার অল্প পরিমাণে দ্বিগুণ দামে কিনেছি। সেগুলো গাড়ির মধ্যেই বসে কোনো মতে খেয়েছি। ’
শাকিল বলেন, ‘এখন পোল্যান্ডের সীমান্তে যেতে আমরা কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। বুথ থেকে অর্থ তুলতে না পেরে সংকটে পড়েছি। বাধ্য হয়ে পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে হেঁটে পথ ধরেছি। আমাদের দলে পাকিস্তান, ভারত ও আফ্রিকার মিলে অন্তত ২৫ জন রয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পোল্যান্ড সীমান্তে সাত বাংলাদেশি পৌঁছাতে পেরেছেন বলে জেনেছি। ’
প্রবাস / এ






