করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দুর্দশা বেড়েছে এসএমই খাতে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২১, ৫:৫৮ অপরাহ্ণসিলেটেরকন্ঠ ডেস্ক:
করোনা-উত্তর দেশের বৃহত্ শিল্প-ব্যবসাগুলোর রমরমা অবস্থা হয়েছে। এর বিপরীতে ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসাগুলো প্রায় ধসে পড়েছে। এই অবস্থা কাটাতে ২০২১-২২ সালের বাজেটে দেশের ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প-ব্যবসাগুলোর অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সরকারের উচ্চমহল থেকে অঙ্গীকারের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে, এসএমইগুলোর জন্য কী করবেন তারা, তা অবশ্য স্পষ্ট করে কেউ বলছে না। এমতাবস্থায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি।
১) ২০২০ সালে দেশে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। করোনাকালে বৃহত্ শিল্প-ব্যবসাগুলো সচল এবং লাভজনক থাকলেও, ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। ফলে সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। এই সময় সরকার বৃহত্ শিল্প-ব্যবসাগুলোর জন্য ৩০ হাজার কোটি, গার্মেন্ট সেক্টরের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প-ব্যবসাগুলোর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর পর বৃহত্ এবং গার্মেন্ট শিল্পের জন্য ঘোষিত প্যাকেজের প্রায় শতভাগ অর্থছাড় হলেও, এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র-মাঝারি খাতে ঘোষিত অর্থের মাত্র ২৬ ভাগ অর্থ ব্যাংকগুলো ঋণ হিসেবে প্রদান করেছে। এর মধ্যে আবার শুভংকরের ফাঁকিও আছে। ক্ষুদ্র-মাঝারি খাতের বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ নিয়েছে বৃহত্ শিল্পগুলোর সাবসিডিয়ারিগুলো। তাছাড়া শর্তের জটিলতায় ফেলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসাগুলোকে ব্যাংক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ঋণ প্রদানে অনীহা দেখিয়ে যাচ্ছে।
এবারে দ্বিতীয়বার কোভিডের ধাক্কায়, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প-ব্যবসাগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে। তাদের মধ্যকার সিংহভাগের ব্যবসা বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অবণ্টিত অবশিষ্টাংশ যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসাগুলো পায়, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
২) পাইকারি খুচরা ব্যবসায় ধার্যকৃত ট্রেড ভ্যাট আদৌ ভ্যাট নয়। এইটা একপ্রকার সেলস ট্যাক্স বলা যায়। অথচ ভ্যাট প্রথা প্রবর্তনের সময় সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, ‘বিদ্যমান সেলস ট্যাক্স আর আবগারি শুল্ক উঠিয়ে দিয়ে ‘ভ্যাট’ নামের এই আধুনিক কর ব্যবস্থার প্রচলন করা হইল’। করোনার কারণে দেশের ক্ষুদ্র শিল্প-ব্যবসাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাইকারি-খুচরা ব্যবসা হয়েছে বিপর্যস্ত। তাছাড়া জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা অস্বাভাবিক কমে গেছে। উত্পাদন অথবা আমদানির পর সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের কারণে প্রতিটি পণ্য কয়েক হাত বদল হয়ে ক্রেতা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়। ট্রেড ভ্যাটের কারণে ঐসব পণ্যগুলোর দাম অনেক বেড়ে যাবে। পণ্যগুলো জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এসব কারণে পাইকারি খুচরা ব্যবসার ওপর আরোপিত ভ্যাটের চাপে ট্রেডিং খাত আরো বিপর্যস্ত হবে। সে মতে আগামী দুই বছরের জন্য এই খাতে যাতে ভ্যাট আদায় বন্ধ রাখা হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
৩) করোনার পর, দেশের ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পগুলো এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মন্দা অবস্থা ছাড়াও অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক বন্ধ হবার পথে। আমাদের দেশে একটি ‘প্রতিযোগিতা আইন-২০১২’ চালু থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। এর সুযোগ নিয়ে বড় বড় শিল্পগুলো প্লাস্টিকের বদনা-মগ, পাউরুটি-বনরুটি, মায়-চানাচুর-ঝালমুড়িও উত্পাদন বিপণন করছে। ভারতসহ অনেক দেশে এরূপ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও অবিলম্বে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।
দেশের ক্ষুদ্র শিল্পব্যবসার অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রতিযোগিতা আইনের পূর্ণ বাস্তবায়নসহ বৃহত্ শিল্পগোষ্ঠীগুলোর এহেন পণ্যসমূহের উত্পাদন-বিপণন বন্ধ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।