বাঁচাও মুরারিচাঁদ

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫৩ অপরাহ্ণপ্রণবকান্তি দেব::
আকস্মিক এক দূর্ঘটনায় পড়ে ক’দিন থেকে ঘরে বন্দী, হাতের উপর আঘাতটা পড়েছে বলে লিখতেও পারছি না। অথচ বুকের ভেতরটা পুড়ছেই। ভেতরের ক্ষরণের কাছে বাইরের ক্ষত তবু্ও কিছুই না। চোখ কেবল স্ক্রিনে, দেখছি, শুনছি, পড়ছি… পথে নামার ডাক আসছে; যেতে পারছি না… কিন্তু থামছে না দহন, বুকের পাঁজরজুড়ে কেবলই কান্না, হৃদয়ের গহীন থেকে কেবলই উৎসারিত হচ্ছে ঘৃণা, ক্ষোভ। কখনো কখনো অসহায় লাগে, কখনো কখনো দুঃখ লাগে। লজ্জা লাগে, ধৈর্যের আকাশ ভেঙে পড়ে… বিচার চাই- এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার সামর্থ্য নেই, আশা পাই না, অতীতের ভাঙ্গা হৃদয় বোবা কান্না ফিরিয়ে নিয়ে আসে…
আমাদের ভালোবাসার পদ্ম ফোঁটা ক্যাম্পাসের গাঁয়ে লাগলো যে কলংকের দাগ, কী দিয়ে তা মুছানো যাবে? এতো সবুজ, হৃদয় হরণ করা এতো রূপ, এতো মায়া, এতো প্রেম, এতো অনুরাগ, এতো গভীর আবেগ জড়ানো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এদেশে আর ক’টি আছে? অথচ পদ্ম জলের পুকুর আজ কাঁদছে, টিলার ভাঁজে ভাঁজে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যের গৌরববাহী দালানগুলো নুয়ে গেছে লজ্জায়, শতবর্ষী গাছগুলো কাতর শোকে…
কার ভুলে বিদ্যা ভুলে দুর্জনের দখলে মুরারিচাঁদ? কাদের ব্যর্থতায় ব্যথার করুন গোঙানি আজ অযুত কীর্তির স্মৃতিজড়ানো বিদ্যায়তনে? কাদের লোভ আর নীতিহীনতায়,রাজনীতির নামে কাদের অপরাজনৈতিক চর্চায় আজ লুটিয়ে পড়ল সকল গৌরবের মুকুট? ভূলন্ঠিত সব অর্জন?
জ্ঞান, নীতি আর নন্দন চর্চার পবিত্র মৃত্তিকায় দানবের এ উলঙ্গ পদচারণা এবারই নতুন নয়… এর আগে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে ছাত্রাবাসও। কেউ নেই এই ক্ষয়ে যাওয়া রুখে দেবার! রাস্ট্র আছে, আইন আছে, প্রশাসন আছে-তবু কাদের উদাসীনতায়, কাদের লোভানলে পড়ে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটি বিদ্যাপীঠ! একটি অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন-সম্ভাবনাকে ধূলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে কারা?
অসহায় অধ্যক্ষের কাছে কিসের আশায় আর যাবে শিক্ষার্থীরা? যাবে কি আদৌ কেউ কোনোদিন? যদি না যায়, আপনি তবে কার শিক্ষক, কাদের শিক্ষক!
যারা একটি মেয়ের সভ্রমহানির ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইছিলেন, পৃথিবীর সকল বোনের, সকল মায়ের, সকল স্ত্রীর অভিশাপ পড়ুক আপনাদের উপর! যারা এ ঘটনায় প্রশ্রয় দিয়ে, দায় এড়িয়ে কেবল নিজে বাঁচতে চেয়েছিলেন অথবা চাইছেন আপনাদের উপর পৃথিবীর সকল নারীর অভিসম্পাত বর্ষিত হউক!
কলংক নামুক সকল কামুক দৃষ্টিতে, কলংক নামুক পোষাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা, ভদ্রতার মুখোশধারী সকল ভণ্ড, প্রতারকদের উপর!
সর্বনাশ নেমে আসুক নরপশুদের উপর!
ঘন ঘাসের গালিচার দোহাই, সারি সারি নাম না জানা বৃক্ষের দোহাই, শান বাধানো ঘাটের দোহাই, চিরল-বাঁকা পথের দোহাই, আচমকা নাকে লাগা অচেনা ফুলের ঘ্রাণের দোহাই লাগে, দোহাই লাগে অবহেলায় পথে পড়ে থাকা নাম-পরিচয়হীন লতা গুল্মের, ক্লাসের অবসরে গোল হয়ে বসা আড্ডার দোহাই, দোহাই হাত ধরাধরি করে হেটে চলা সমস্ত সুন্দরের— বাঁচাও মুরারিচাঁদ কে!
লেখল : সহকারী অধ্যাপক, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। . . . . . . . . .