বাংলার সৌন্দর্য হাইল হাওরে লাল শাপলার রাজ্য
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:১৬ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরজুড়ে এখন লাল শাপলার উৎসব। প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। সাদা আকাশের নিচে হাওরজুড়ে লাল আভা। এক নজর দেখলেই মন ভরে ওঠে প্রশান্তিতে। এই সৌন্দর্য ঘিরে শ্রীমঙ্গলের পর্যটনশিল্পে জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ।
হাইল হাওরের শাপলার অবস্থান শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর লামাপাড়া, যাত্রাপাশা, শহশ্রী ও যতরপুর গ্রামের হাওর অংশে, গোপলা নদীর তীর ঘেঁষে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় করে দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন; মাঝিদের কাটছে ব্যস্ত সময়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরই শাপলা ফোটে; তবে এ বছর ফুলের পরিমাণ আগের তুলনায় বেশি। তবে সৌন্দর্যের স্থায়িত্ব খুবই কম। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাপলা ফুল ফুটে থাকে, আর বিকালে ধীরে ধীরে কলিতে পরিণত হয়। আগামী এক মাস এই দৃশ্য উপভোগ করা যাবে।
নৌকার মাঝি লতিফ মিয়া বলেন, ‘অস্থায়ী হলেও আমরা আনন্দের সঙ্গে মেহমানদের ঘুরিয়ে দেখাই। যখন দেখি মানুষের মুখে আনন্দ, ভালো লাগে। পানি কমে গেলে হয়তো আর কাজ পাব না, কিন্তু এই সময়টা আমাদের জন্য বড় সহায়।’ আরেক মাঝি খানব মিয়া বলেন, ‘সময়ভেদে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় ঘুরাই। অনেক সময় মানুষ যা দেয় তাই
নিই। আনন্দটাই আসল।’
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আয়মন আলী জানান, এ বছর শাপলার পরিমাণ বেশি। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে। লামাপাড়ায় ২০২৫টি নৌকা রাখা হয়েছে, যাতে অল্প ভাড়ায় ঘুরে দেখা যায়।
সকালে হাওরপাড়ে দেখা যায়, মৎস্যজীবীরা সারা রাতের ধরা মাছ বিক্রি করছেন। দর্শনার্থীরাও কিনে নিচ্ছেন। পানি কমতে থাকায় অনেক কৃষক শাপলা তুলে ধানী জমি তৈরির কাজও শুরু করেছেন।
দর্শনার্থীদের অভিযোগ, হাওরের রাস্তাটি খুবই খারাপ। এ বিষয়ে মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিছলু আহমদ চৌধুরী বলেন, রাস্তার কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে; তবে পুরোটা করা জরুরি। কৃষক, পর্যটক, মৎস্যজীবী সবাই ভোগেন। হাওরের বিলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিল ও গোপলা নদী খনন খুবই জরুরি।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, হাইল হাওরের ওই অংশে রাস্তা সংস্কার ও গোপলা নদীর ওপর সেতু স্থাপন করা গেলে পর্যটকদের যাতায়াত যেমন সহজ হবে, তেমনি বিচ্ছিন্ন জনপদ যতরপুরের যাতায়াত ব্যবস্থাও উন্নত হবে।
বেড়াতে আসা কাতার প্রবাসী সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘শাপলার এমন রাজ্য আমি আগে কোথাও দেখিনি। মনে হচ্ছে প্রকৃতি যেন একেবারে হাতে করে দেখাচ্ছে তার সৌন্দর্য।’



