সিলেটে জাল দলিলে শত কোটি টাকার সরকারি ভূমি বিক্রি, অতঃপর…
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ণ
ভূমির মালিক সরকার। দীর্ঘ মেয়াদী লিজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চা বাগান। আর বাগানের সরকারি ভূমি রীতিমতো দলিল করে হচ্ছে বিক্রি। জাল কাগজপত্র দিয়ে বিক্রয় করা ভূমিতে গড়ে ওঠেছে বাসা-বাড়ি। ভূমিখেকো জালিয়াত চক্র এতোই প্রভাবশালী যে ভয়ে বাগান কর্তৃপক্ষও ছিল অসহায়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩০ একর ভূমি। যার মূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা- জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নে খাদিমনগর চা বাগানের অবস্থান। সরকারি ভূমি লিজ নিয়ে গড়ে ওঠেছে বিশাল চা বাগান। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগানের সমতল জায়গা দখল করে আসছিল স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। বাগানের কর্মকর্তা, জাল দলিলের কারিগর ও স্থানীয় ভূমিখেকোরা মিলে এই চক্র তৈরি করে শুরু করে সরকারি জায়গা দখল। জাল দলিল সৃজন করে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্লট আকারে জায়গা বিক্রি করে। মাঝে মধ্যে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জালিয়াতির বিরুদ্ধে কথা বললেও প্রভাবশালীদের হয়রানির মুখে তাদেরকে থেমে যেতে হয়।
সূত্র জানায়, অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে জায়গা পেয়ে অনেকে জেনেশুনেও জাল দলিলমূলে চা বাগানের সরকারি জায়গা ক্রয় করেন। জায়গা ক্রয়ের পর তারা সেখানে গড়ে তুলে বাসাবাড়ি। কেউ নিজে বসবাস করেন, আবার কেউ দিয়ে দেন ভাড়া। আবার কেউ জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে জায়গা ক্রয় করে প্লট আকারে পুনঃবিক্রিও করেন।
গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন র্যাবের একসময়ের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আলোচিত সাদাপাথর লুট বন্ধ ও উদ্ধার কাজে প্রশংসিত ভূমিকা রাখেন। এরপর তিনি সরকারি ভূমি উদ্ধার ও দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রেলওয়ের মূল্যবান ভূমি দখলমুক্ত করেছেন তিনি। গত শুক্রবার তিনি খাদিমনগর চা বাগান পরিদর্শনে গিয়ে অবৈধ দখলে থাকা সরকারি ভূমি উদ্ধারের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সময় বাকবিতণ্ডায় জড়ায় জালিয়াতচক্রের সদস্য জনৈক মোজাম্মেল হোসেন লিটন। পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাকে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, গত শনিবার সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনুর রুবাইয়াৎ’র নেতৃত্বে দিনভর অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে ৩০টি স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৩০ একর সরকারি ভূমি। এসময় একটি ঘরের ভেতর থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে জালিয়াতচক্রের মুলহোতা খাদিমনগর চা বাগানের সাবেক ব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক হোসেন কোরেশী ও তার সহযোগী জাল দলিল সৃজনের হোতা শাহজাহান ওমরকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত তাদের উভয়কে ১ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। এছাড়া জালিয়াতচক্রের বিরুদ্ধে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় নিয়মিত মামলাও হয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনুর রুবাইয়াৎ জানান, ভূমিখেকোরা খুবই প্রভাবশালী। উচ্ছেদ অভিযানের সময় তারা প্রশাসনকে বাধা দিতে চেয়েছে। পরে ভূমি আইনে উচ্ছেদ ও জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারি ভূমি উদ্ধারে এরকম অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।





